সিরিয়া থেকে পালিয়েও আসাদ থেকে পালাতে পারেনি যেসব শরণার্থী 

এনাম হাসান জুনাইদ।।

আদনান ভেবেছিল, সিরিয়া থেকে পালিয়ে সে বেঁচে গেছে। লেবাননে সে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু তা হলো না। আসাদের বন্দুকের নল লেবাননেও পৌঁছে গেছে।

আদনান যেদিন পালাবে, সেদিন রাতে তার বাবাকে তাদের এক হিতাকাঙ্খী ফোনে জানিয়েছে, আজ রাতে সরকারি লোকজন আসতে পারে আদনানের খোঁজে,’ বলেন আদনান।

আদনান সিরিয়া সরকারের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত। কারণ ২০১১ সালে আদনান সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। আদনানের মত যারা আছে সবাইকে সিরিয়া সরকার এখন সন্ত্রাসীদের তালিকাভুক্ত করেছে। এ তালিকা থেকে শিশুরাও বাদ যায়নি।

লেবাননের পথে পা বাড়িয়ে আদনান সেই এক লাখ ত্রিশ হাজার শরণার্থীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল যারা সিরিয়া থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

যাই হোক, জাতিসংঘের এক জরিপ অনুযায়ী প্রায় ৩০ হাজারের অধিক লোক লেবাননে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

আদনান তার ছেলেকে নিয়ে সিরিয়ায় পালিয়ে আসে। সিরিয়ার যুদ্ধে তাঁর স্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তার পাঁচ বছর বয়সী সন্তান রয়েছে।

‘স্ত্রী খোঁজ না থাকায় সন্তানের দেখাশোনা আমাকেই করতে হয়। কিন্তু লেবাননে এটা খুবই কষ্টকর। কারণ আমাকে তো কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়,’ বলেন আদনান।

একবার বৈরুতে আদনান হিজবুল্লাহর সশস্ত্র যোদ্ধাদের কবলে পড়ে। তারা তার মাথায় রাইফেল দিয়ে আঘাত করে। কিন্তু সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

সিরিয়ে থেকে পালিয়েও নিরাপদে নেই আদনান। মাঝেমধ্যে আদনানকে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বন্ধুর ঘরে আশ্রয় নিতে হয়। ‘ রিফিউজি ক্যাম্পে বিভিন্ন অজ্ঞাত পরিচয় লোকজন ঘোরাফেরা করে। তারা আমার পরিচয় ও কোথায় থাকি জানতে চায়,’ বলেন আদনান।

‘কিন্তু আমি কখনো ধরা দিব না। কারণ ইতিপূর্বে যারা ধরা দিয়েছে, তারা কেউ ফিরে আসেনি,’ যোগ করেন আদনান।

মোহাম্মদ, আরেকজন সিরিয়া শরণার্থী ও আইনজীবী ‘মিডল ইস্ট মনিটর’কে বলেন, লেবাননে কোন আইন নেই। হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা দেশ চালায়। এখানে আইন বলতে হিজবুল্লাহ।

সিরিয়াভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন বলেছে, তাদের কাছে ৭০০ লেবাননে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শরণার্থীর মামলার নথিপত্র রয়েছে যারা গুম, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অথচ লেবানন ‘আইসিসিপিআর’ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ, যা বিনা কারণে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না।

সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, তাদের কাছে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে যে, সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে বিভিন্ন নামের তালিকা পাঠায়, যাদেরকে পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয়, বন্দি করা হয় কিংবা মেরে ফেলা হয়।

সিরিয়ায় বাশার আসাদ আবার ক্ষমতা হাতে নিয়েছে। আদনান এর মত আরো যারা বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল তাদের জন্য দেশে ফেরার সম্ভাবনা এক প্রকার শেষ হয়ে গেছে।

আসাদের তো ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর মত টাকাকড়ি নেই আর নিজের জীবন, সন্তানের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে সাগর অতিক্রম করা তার পক্ষে সম্ভবও নয়।

‘আমার সামনে একটাই রাস্তা, লেবানন ও সিরিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশে আশ্রয় খোঁজা,’ বলেন আদনান।

আদনানের মনে আশার আলো ঝিলিক দিয়েছিল যখন ২০১৫ সালে ‘অ্যামনেস্টি’ বলেছিল, তারা তার পুনর্বাসনের বিষয়টি ফ্রান্স ও সুইশ সরকারের নিকট পাঠিয়েছে। কিন্তু পরে তাদের আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়। আদনানের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সুইজারল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তুমি একটি নিরাপদ তৃতীয় দেশেই আছো। তোমাকে ঝুঁকিতে আছ বলে মনে হচ্ছে না।

সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর

পূর্ববর্তি সংবাদনির্বাচনী প্রচার অভিযানে মোদির হেলিকপ্টার বিকল
পরবর্তি সংবাদমোংলা ও পায়রা বন্দরে ৭, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত