“তাদেরকে প্রতিদিন সত্তরবার ক্ষমা করবে”

এনাম হাসান জুনাইদ।।

১৩ বছরের কিশোরী রাবেয়া ঢাকা এসেছিল তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে গৃহ পরিচারিকা হিসেবে কাজ করার জন্যে। লক্ষ্মীপুরের এক গ্রাম থেকে সে এসেছে। ঢাকায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করে বাবা-মাকে সহযোগিতা করবে এই তার আশা। কিন্তু তার সব আশাই মাটি হয়ে গেল।

আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হতে হল। রাবেয়া প্রতিদিন মার খেত তার গৃহকর্ত্রীর হাতে।

বাবেয়ার বাবা আমির হোসেন ৬মাস একটি ইটখোলায় কাজ করেন। আর ৬ মাস দিন মজুর হিসেবে কাজ করে পরিবারের ভরণ-পোষণ করেন। তার তিন মেয়ে দুই ছেলে। রাবেয়ার মা হাজেরা বেগম বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

আমির হোসেনের একার পক্ষে সংসারের খরচের পাশাপাশি স্ত্রীর ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করা কঠিন। তাই আরও কিছু আয়রোজগারের জন্য তারা মেয়েকে ঢাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

রাবেয়ার চাচা ফজলু মিয়া বলেন, রাবেয়াকে নাস্তা করার জন্য সকালে দেওয়া হত পান্তা ভাত। তাকে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করানো হতো। ঠিক মত বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হত না।

রাবেয়াকে তার মা-বাবার সাথে কথা বলার জন্য খুব সামান্যই সুযোগ দিত, তাও আবার কথা বলতে হতো গৃহকর্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে।

একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে শতকরা ৬২ ভাগ গৃহপরিচারক বা গৃহপরিচারিকা গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর হাতে মারধরের শিকার হয়। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ গৃহকর্তারা স্বীকার করতে চান না মারধর করার কথা।

জরিপ অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় ৩ লাখ শিশু গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ২৫ হাজার মেয়ে শিশু। এদের অধিকাংশ আসে গ্রাম থেকে। শহর ও নগর থেকে আসে মাত্র ১০ ভাগ। এসব শিশুর শতকরা ২০ ভাগ অভিভাবক ঢাকায় থাকে। ৮০ ভাগ শিশুই তাদের অভিভাবক বিশেষ করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকে। একভাগ শিশুর কোনো অভিভাবক নেই।

দেশে সাধারণ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন সচেতনতা লক্ষ্য করা গেলেও গৃহপরিচারকদের অধিকারের বিষয়ে তেমনটি দেখা যায় না। অথচ ইসলাম সাধারণ শ্রমিকদের মত গৃহপরিচারকদের অধিকারের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করেছে।

গৃহ পরিচারকদের ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা কী এ প্রশ্নের জবাবে বিক্রমপুর বাদশাহী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মাহমুদ হাসান বলেন, “গৃহ পরিচারকদের ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা হল, তোমার সেবায় নিয়োজিত যে সে তোমারই ভাই। তোমার মত সেও এই সমাজের একজন। তারও রক্তমাংসের শরীর আছে, এবং আছে একটি হৃদয়। সেখানে অনেক আশা আছে, আছে অনেক স্বপ্ন।”

“তোমার যেমন অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়, তারও অনেক জিনিসের দরকার হয়। সুতরাং তোমাদের উচিত, তাদের প্রয়োজনগুলো স্বীকার করা। তাদের আকাঙ্খাগুলো একটু শ্রদ্ধা করা। তাদের সাথে নরম ভাষায় কথা বলা।”

“কথায় কথায় তাদেরকে ভর্ৎসনা করো না। তাদের অপদস্থ করো না। তাদেরকে প্রহার করো না। তাদেরকে তোমাদের খাবারে শরীক করো। তাদের ভুলগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখো। তাদেরকে এমন কাজ দিও না যা তাদের সাধ্যের বাইরে। তাদের জন্যে কষ্টকর এমন কাজ দিলে সে কাজে তুমিও তাদের সাথে শরীক হও,” যোগ করেন মাওলানা মাহমুদ হাসান।

মাওলানা মাহমুদ আরও বলেন, একবার এক সাহাবী রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আমাদের সেবকদেরকে দৈনিক কয়বার ক্ষমা করব। রাসূল কোনো উত্তর দিলেন না। সাহাবী আবার একই প্রশ্ন করলেন। তখনও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। তৃতীয়বার প্রশ্ন করার পর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন, তাদেরকে প্রতিদিন সত্তরবার ক্ষমা করবে।

পূর্ববর্তি সংবাদউড়ো চিঠিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বোমা হামলার হুমকি
পরবর্তি সংবাদময়মনসিংহে সিটি নির্বাচন উপলক্ষে ৫ মে সাধারণ ছুটি