সামাজিক কোনো অবক্ষয়ের দায় সরকার এড়াতে পারে না : মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী

ক্রিকেটের সঙ্গে জুয়ার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার কথা এখন আর অজানা বিষয় নয়। প্রতিদিন ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে শত শত কোটি টাকার জুয়া হয় পৃথিবীজুড়ে। আর এর বড় একটা অংশই হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ উপলক্ষ্যে। বর্তমানে জুয়ার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের মধ্য ও নিম্ন শ্রেণির মধ্যেও। আইপিএল কেন্দ্র করে শহর, শহরতলী ও গ্রামের বাজারগুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জুয়া হচ্ছে। এতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে অনেক মানুষ। বাড়ছে সামাজিক কলহ।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দেশের বিশিষ্ট আলেম ও ইত্তেফাকুল উলামা ময়মনসিংহের মজলিসে আলেমার সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আতাউর রহমান খসরু


ইসলাম টাইমস : বর্তমানে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল চলছে। ক্রিকেটের এই আসর কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জুয়ার বিস্তৃতি ঘটছে। বিশেষত সমাজের নিম্ন শ্রেণিতে। ইসলাম জুয়ার ব্যাপারে কী বলে?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : এটা সূর্যের চেয়ে স্পষ্ট একটি বিষয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে জুয়াকে শয়তানের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। শয়তানের কাজ মানুষের জন্য কল্যাণকর ও ভালো হতে পারে। জুয়া মানুষের জন্য ধ্বংসই বয়ে আনবে কোনো সন্দেহ নেই।

ইসলাম টাইমস : জুয়ার আসরগুলো সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : ইসলামি শরিয়তে যা কিছু হারাম করেছে তার প্রত্যেকটা বিষয়ই এমন। একটু চিন্তা করলে বোঝা যায় ইসলাম কেনো এটা হারাম করেছে। ইসলাম সুদ হারাম করেছে। সমাজে সুদের প্রচলন হওয়ার পর সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। হানাহানি বাড়ছে। জুয়ার বিষয়টিও এমন। তার কারণে লাখ লাখ মানুষ পৃথিবীতে প্রতিদিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

ইসলাম টাইমস : যেসব দোকানে খেলা দেখানো হয় এবং সে সুযোগে মানুষ জুয়ায় লিপ্ত হয় তাদের দায় কতোটুকু?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : বর্তমানে সেসব খেলা হয় সেখানে ইসলামের নিষিদ্ধ অনেক জিনিস থাকে। যার কারণে খেলা দেখা ও দেখার সুযোগ করে দেওয়াটাই বৈধ বলা যায় না। সেখানে জুয়ার আসর বসলে তা তো আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার।

দুনিয়ার নিয়মই হয়ে গেছে স্বার্থপূজা। সবাই তার নিজের স্বার্থটাই বোঝে। নিজের সামান্য স্বার্থের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের বড় বড় ক্ষতি করতে মানুষ দ্বিধা করে না। মাদকের কথাই ধরুন! যারা বিক্রি করে তারা এর ক্ষতি সম্পর্কে জানে না? অবশ্যই জানে। তারপরও তা বিক্রি করে কেন? স্বার্থের জন্য। যারা চায়ের দোকানে, হোটেলে, ক্লাবে টিভি বসিয়ে জুয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে তারাও ভালো বিক্রি, জুয়ার অংশ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম স্বার্থের পূজা করছে। স্বার্থের পূজারীদের বোঝানো ও ফেরানো খুব কঠিন। স্বার্থের কারণে মানুষ নবী-রাসুল আ.-এর দাওয়াত পর্যন্ত গ্রহণ করেনি।

ইসলাম টাইমস : সামাজিক এই অবক্ষয় রোধে সরকারের কিছু করার আছে বলে কি আপনি মনে করেন?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : সরকারের অবশ্যই করার ছিলো। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, সরকার এমন অনেক কাজ –যা জুয়ার মতো ভয়াবহ না বা তার ধারে-কাছেও না- তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। সুতরাং সরকার চাইলে এটাও করতে পারতো। সরকারের ইচ্ছার বাইরে এই খেলা সম্প্রচার করা সম্ভব? বর্তমান সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে। তাহলে জুয়ার আসরগুলো বন্ধ করছে না কেন? সামাজিক অবক্ষয়ের দায় সরকারের অস্বীকারের সুযোগ কোথায়? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ দেখে মনে হয়, তারা এসব বিষয়ে কোথাও যেন ‘ধরা’।

ইসলাম টাইমস : সরকারের দাবি, আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন।

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : সরকারের অনেক দাবি বাস্তবতা বিরোধী। আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আইনের প্রয়োগ ও আদালতের বিচার নিয়ে জনগণ সত্যি হতাশ। আইন-আদালতের প্রতি মানুষের ন্যূনতম আস্থা নেই। আমাদের কাছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ আসে। তারা আইন-আদালতের প্রতি তাদের হতাশার কথাই বলে।

আবার এটাও ঠিক যে, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সামাজিক অবক্ষয় রোধে কাজ করছে। তবে জনগণের আস্থা অর্জনের আরও বেশি কাজ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

ইসলাম টাইমস : জুয়ার পরকালীন শাস্তি কী?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : জুয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে চূড়ান্ত পর্যায়ের নিন্দনীয় একটি অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা মদপান ও মূর্তিপূজার সঙ্গে তার উল্লেখ করেছেন। মদ-জুয়াকে মহাপাপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং পরকালেও তার শাস্তি এমন ভয়াবহই হবে কোনো সন্দেহ নেই।

ইসলাম টাইমস : উলামায়ে কেরামের করণী কী?

মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী : উলামায়ে কেরাম জুয়ার জাগতিক ও পরকালীন ক্ষতির কথাগুলো বলে সতর্ক করতে পারেন। ওয়াজ-মাহফিল ও মসজিদে এই ব্যাপারে কথা বলতে পারেন। কিন্তু কীভাবে বলবেন? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে আলেমদের কথা বলার সুযোগ সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে! (খানিকটা উষ্মা প্রকাশ করে) তবুও নবীর ওয়ারিস হিসেবে সমাজের মানুষকে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের পথে উলামায়ে কেরাম ডেকে যেতেই হবে। আমরাও তাই করে যাবো। ইনশাআল্লাহ!

পূর্ববর্তি সংবাদমাওবাদীদের সাথে গোলাগুলিতে চার বিএসএফ জওয়ান নিহত
পরবর্তি সংবাদগাড়ি চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক : মেয়র আতিক