কেমিক্যালের পর ভবনের নকশা : দায় বদলের খেলা কবে বন্ধ হবে?

আবু তাশরীফ ।।

বৃহস্পতিবার বনানীতে আগুন লাগা ও উদ্ধার তৎপরতায় দেরি হওয়া নিয়ে নাগরিকদের নানা শ্রেণির মাঝে এখন প্রশ্ন ও ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। এরই মধ্যে শনিবার ভোররাতে আগুন লেগেছে গুলশানের একটি মার্কেটে। অল্প কয়দিন আগে চুড়িহাট্টায় আগুনের ধ্বংস লীলায় করুণ মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। আগুন লাগা ও আগুনে পুড়ে মানুষ মরার ঘটনা রাজধানী ঢাকায় এখন নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, প্রতিবারই আগুনে বহু প্রাণের করুণ মৃত্যুর ঘটনার জন্য ঘটনার পরপর নানা রকম দায় চাপানো, হম্বিতম্বির, বাগাড়ম্বর চলে। আগুন যেন নগরীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে না ফেলে, আগুন লেগে গেলেও সময় মতো যেন মানুষজনকে উদ্ধার করা যায়, অল্প সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়- সেরকম কোনো পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবং নেওয়া হচ্ছেও না।

চুড়িহাট্টা-চকবাজারের আগুনের সময় সব দায় কেমিক্যালের ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার কসরত দেখা গেছে। বনানীর ঘটনার পর দায় পড়েছে ভবনের ওপর। দুটি দায়ের ব্যাপারটি যথাস্থানে ঠিকিই আছে, কিন্তু উদ্ধার তৎপরতায় এত বিলম্ব, এত অপ্রতুলতা নিয়ে কথা বলছেন না কর্তারা। বাইরে থেকে যারা কথা বলছেন, তারা কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। কিন্তু আগুন লাগা ভবন বা জায়গা থেকে বিপন্ন মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করার মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকার সংকটটি দূর করার কোনো চেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে না কেন- বুঝতে পারছি না। কত রকম বিকল্প ব্যবস্থার এখন সারা দুনিয়ায় চর্চা হয় আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য, উঁচু ভবন থেকে উদ্ধার ও লাফিয়ে নামানোর জন্য- তার কোনো ছিটেফোটা আয়োজনও ঢাকায় লাগা আগুনের ঘটনার সময় দেখা যায় না। এটি নিঃসন্দেহে এ দেশের নানা মাত্রিক উন্নয়নের গল্পের সঙ্গে অত্যন্ত বেমানান একটি ব্যাপার।

রাজধানীকে এখন দুঃখভরা রসিকতার সঙ্গে তাই অনেকেই বলছেন ‘লাশধানী’। এ পরিস্থিতি বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। শহর-নগর-গ্রাম সব জায়গায় নাগরিকরাই চান, এই দুঃখ দূর হোক। যে কোনো ভবনের আগুন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা দরকার। আগুন যেসব উপকরণে বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে- তার সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে পদক্ষেপ দরকার। কিন্তু সব অবস্থাতেই শহরে-নগরে আগুন লেগে গেলে দ্রুত উদ্ধার ও আগুন নেভানোর আয়োজনটাকে সক্ষম করে তুলতে হবে। আগুন লাগলে শুধু ভবনের দায়, কেমিক্যালের দায়, ঘিঞ্জি জনবসতির দায় কাজের কোনো কথা হতে পারে না। দায় উদ্ধার তৎপরতার অসক্ষমতা, বিলম্ব, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকা বা না করারও কম নয়। দুর্ঘটনা ফর্মুলা ধরে ঘটে না। উদ্ধার তৎপরতা সব অবস্থাতেই দ্রুত ও চৌকস হওয়া জরুরি। এ কথাটা কর্তাদের বুঝতে হবে। সাত-পাঁচ বলে বলে পোড়া লাশের একটি নগরী পরিণত হওয়া কারও জন্যই সহনীয় হতে পারে না।

পূর্ববর্তি সংবাদজাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে ছিনতাই, ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
পরবর্তি সংবাদওষুধের নামে বাংলাদেশিকে বিষপানে হত্যা করলেন বিদেশি স্ত্রী!