হোলি ও পহেলা বৈশাখের মতো উৎসব মুসলমানের হতে পারে না : ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন

গত ২১ মার্চ ছিলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ ধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রা ও হোলি। হোলি হিন্দু ধর্মের বিশেষ উৎসব হলেও এখন তাকে সর্বজনীন করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীর ও কিছু সংখ্যক মিডিয়ায়। দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসেও হোলি নিয়ে এক ধরনের মাতামাতিও দেখা যাচ্ছে বিগত কয়েক বছর। মুসলমানের সন্তানরা বুঝে কিংবা না বুঝেই অংশগ্রহণ করছে তাতে।

মুসলমানের সন্তানদের হিন্দু রীতিতে হোলি উৎসব পালন এবং আসন্ন পহেলা বৈশাখ নিয়ে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম ওমর গণি এমএসই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আতাউর রহমান খসরু


ইসলাম টাইমস : একজন মুসলমানের হোলি উৎসবে যোগ দেওয়ার সুযোগ আছে কী?

ড. খালিদ হোসাইন : প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব কিছু উৎসব ও আচার আছে। হোলি হিন্দু ধর্মের উৎসব ও আচার। এর সঙ্গে তাদের ধর্ম বিশ্বাস জড়িত। সুতরাং কোনো মুসলমানের হোলি উৎসবে যোগ দেওয়ার সুযোগ নেই।

ইসলাম টাইমস : হোলি উৎসব নিয়ে সাধারণ নাগরিকেরও কিছু অভিযোগ রয়েছে।

ড. খালিদ হোসাইন : হ্যা, আমার মনে পড়ে কয়েক বছর আগে হোলি উৎসবের নামে পথিক ও বাস-যাত্রী নারীদের শরীরে জোরপূর্বক রঙ ছিটানো হয়। সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করা হয়। এতে বাধ্য হয়ে সরকার শহরাঞ্চলে হোলি উৎসবের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে। কিন্তু এখনও ক্যাম্পাসগুলোতে সেই প্রবণতা রয়ে গেছে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বহু শিক্ষার্থীকে হোলি উৎসবে জড়ানো হচ্ছে। এবং তাতে বাতাস দিচ্ছে এক শ্রেণির মিডিয়া।

আমাদের দেশের অনেকেই দেখবেন ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু যখন রাস্তা বন্ধ করে হোলি উৎসব করা হয় এবং মানুষের গায়ে রঙ ছিটানো হয় তখন তারা চুপ করে থাকেন। এটা অন্যের ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা নয়? এটা কী এক ধরনের আগ্রাসন নয়?

ইসলাম টাইমস : আপনি আগ্রাসন বলছেন, কেন? ভয়টা কোথায়?

ড. খালিদ হোসাইন : আমাদের এক শ্রেণির মিডিয়ার ভেতর দেখবেন হোলি উৎসবসহ হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিকে সর্বজনীন করার প্রবণতা নিয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে ভারতে হোলির দিন ক্রিটেক খেলার অপরাধে মুসলিমদের মারধর করা হচ্ছে। তাহলে উভয় প্রবণতার মধ্যে মিল পাওয়া গেল কী না? জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য আতঙ্কের। এতে মুসলমানের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক নিজস্বতা হুমকির মুখে বলেই অনেকের আশঙ্কা।

ইসলাম টাইমস : একটি ধর্মীয় উৎসব কী সর্বজনীন হতে পারে না?

ড. খালিদ হোসাইন : আজকাল সর্বজনীন উৎসবের নামে যা কিছু হচ্ছে তা কিন্তু একপ্রকার আগ্রাসন। যেমন ধরুন! পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা। এখানে যেসব প্রাণীর মুখোশ ও প্রতিকৃতি তৈরি করা হয় তার প্রত্যেকটার ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে হিন্দু ধর্ম মতে। বিষয়টা তাহলে সর্বজনীন কীভাবে হলো? যেখানে আমার ধর্ম উপেক্ষিত সেখানে আমার অংশগ্রহণ তো আত্মসমর্পণের নামান্তর। যখন এভাবে অন্য ধর্মের প্রধান্য বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের নিজস্ব জাতি সত্ত্বা এক সময় হুমকির মুখে পড়বে।

ইসলাম টাইমস : মিডিয়া ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর প্রচারে একটি বাক্য প্রায় উচ্চারিত হয়। তাহলো, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

ড. খালিদ হোসাইন : ‘ধর্ম যারা উৎসব সবার’ কথাটি ভিত্তিহীন। কোনো ধার্মিক মানুষ –সে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক- এই কথা বলতে পারে না। তাহলে পৃথিবীতে ধর্মে স্বাতন্ত্র টিকবে কীভাবে? আমাদের ঈদ কী বৌদ্ধদের জন্য উৎসব? বৌদ্ধদের ‘বৌদ্ধ পূর্নিমা ও কঠিন চিবরদান’ কী হিন্দুদের উৎসব? আপনি দেখবেন, যারা পহেলা বৈশাখ ও হোলিকে সবার উৎসবে পরিণত করতে চাচ্ছে তারা কিন্তু ঈদকে সর্বজনীন করার চেষ্টা করছে না। তাহলে বিষয়টি কেমন হলো? ‘ওপারে’র সংস্কৃতি সর্বজনীন, কিন্তু এপারের সংস্কৃতি শুধু মুসলমানের। তাই ধর্ম যার উৎসবও তার –এটাই বাস্তবিক।

ইসলাম টাইমস : কলেজ-ভার্সিটিতে হোলির প্রভাবকে সবচেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হয়। কেন?

ড. খালিদ হোসাইন : কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেক্যুলার ও বাম রাজনীতির প্রভাবটা বেশি। ক্যাম্পাসে সচেতনভাবে ইসলাম ও ইসলামি শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। স্কুল-কলেজের পাঠ্য ও পাঠদানের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রতি বিদ্বেষটা সচেতনভাবে লালন করা হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের ভেতর হোলি-বৈশাখ উদযাপনের মাত্রাটি বেশি।

ইসলাম টাইমস : এক দশক আগেও আমাদের দেশে হোলি নিয়ে এমন মাতামাতি ছিলো না। এখন তা হচ্ছে। কারা এই দেশে অন্য ধর্মীয় এসব সংস্কৃতির আমদানি করছে বলে আপনি মনে করেন?

ড. খালিদ হোসাইন : এক শ্রেণির উগ্র ধর্ম নিরপেক্ষাতাবাদী বুদ্ধিজীবী এই বিদেশি সংস্কৃতির আমদানিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আপনি যদি তাদেরকে কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য বিষয়ক কোনো সেমিনারে আহবান জানান তারা এড়িয়ে যাবে। কিন্তু তাদেরকে যদি রবীন্দ্রনাথের উপর কোনো সেমিনারে আমন্ত্রণ করেন তাদের ভীড় পড়ে যাবে। কারণ, নজরুল সাহিত্যের একটি অংশে ইসলামের বন্দনা আছে। এসব বুদ্ধিজীবী ও তাদের সমমনা কিছু কিছু মিডিয়া এই দেশে ওপাড়ের সংস্কৃতি আমদানিতে ব্যস্ত।

ইসলাম টাইমস : ইসলামের সাথে উৎসবের সম্পর্কটা কোথায়?

ড. খালিদ হোসাইন : আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বার পরিচয় হারিয়ে যাবে। নিজের অজান্তে কুফরি ও শিরকি চিন্তা-চেতনায় আক্রান্ত হবো। নামমাত্র মুসলিমে পরিণত হবো। কারণ, এসব সংস্কৃতি পৌত্তলিকতার ধারক ও বাহক। এর মূলে আছে, দেব-দেবীর প্রতি সম্মানবোধ যা তাওহিদে বিশ্বাসী মুসলিমরা কোনোদিন চর্চা করতে পারে না। আমাদের তাওহিদি চেতনাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলবে।

ইসলাম টাইমস : আপনি যেসব আশঙ্কার কথা বললেন, তা থেকে বাঁচতে হলে করণীয় কী?

ড. খালিদ হোসাইন : আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হবে। কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সামনে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে। মিডিয়াগুলো জাতীয় স্বার্থে কাজ করতে হবে।

 

পূর্ববর্তি সংবাদইসরাইলের হামলায় ফিলিস্তিনের ২ মিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি
পরবর্তি সংবাদযথাসম্ভব দীনের কাজে লেগে থাকবে : সমাপনী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আল্লামা আহমদ শফী