মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী: জীবনের বাঁকে বাঁকে

[বর্তমান বিশ্বে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর সঠিক প্রতিনিধিত্বকারী যে সকল আলিমে দ্বীন রয়েছেন, শায়খুল ইসলাম ‍মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী তাদের অন্যতম।

 গত শুক্রবার জুমার নামাজ পড়াতে যাওয়ার সময় তিনি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। কিন্তু সম্পূর্ণ অলৌকিকভাবে  অপশক্তির হাত থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। আমরা হযরতের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ হায়াত কামনা করি।

এ ঘটনার পর থেকে অনেকের কৌতুহল হচ্ছে, তার জীবনী সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানার। বিগত প্রায় এক বছর ধরে ‘ইয়াদেঁ ’শিরোনামে তিনি তার আত্মজীবনী লেখা শুরু করেছেন।  

নীচে ইসলাম টাইমসের পাঠক বর্গের জন্য তার জীবনীর বিভিন্ন দিক সংক্ষেপে তুলে ধরা হল। ]

ইসলাম টাইমস ডেস্ক:

জাস্টিস মুফতী মুহাম্মাদ তাকি উসমানি বর্তমান বিশ্বের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে  বিশ্বখ্যাত জ্ঞানতাপস, বিদগ্ধ পন্ডিত, প্রতিথযশা আলেম,  মাদরাসার শায়খুল হাদিস, বিশ্ববিখ্যাত মুফতী,  পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের  বিচারক,   সুলেখক, সুবক্তা,  বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক।

বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোতে তার রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ রেফারেন্স বুক ও পাঠ্য বই  হিসাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। তার ছাত্ররা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

তার আরো বড় পরিচয়, তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন স্বার্থক নববী উত্তরাধিকারী, বহু আকাবিরের স্নেহধন্য,  আকাবির ও আসলাফের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

জন্ম

মাওলানা তাকী উসমানী ৫ শাওয়াল ১৩৬২ হিজরী মুতাবেক ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে তাঁর পরিবার হিজরত করে পাকিস্তান গমন করেন।

তাঁর বাবা পাকিস্তানের বিখ্যাত আলেম মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. ।  তাঁর বংশধারা ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান রা.-এর সাথে মিলিত হয়েছে।

শিক্ষাজীবন

পরিবারে মায়ের কাছেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মার কাছেই তিনি উর্দু ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন।

১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে আট বছর বয়সে তিনি দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকেই দরসে নেযামি সিলেবাসের সর্বোচ্চ স্তর দাওরা হাদিস সমাপন করেন।

দাওরা হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় তিনি সেরা নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

এরপর তিনি তাঁর পিতা মুফতি শফী উসমানীর তত্ত্বাবধানে ইসলামী ফিকহে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দারুল উলুম করাচী থেকে ফিক্‌হ ও ফতোয়ার ওপর তাখাস্সুস (পি.এইচ.ডির সমমানের ডিগ্রি) সম্পন্ন করেন।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.কম এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি পাশ করেন। এছাড়া তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রিও অর্জন করেন।

তিনি শায়খ হাসান মাশশাত, মুফতী মুহাম্মদ শফী উসমানী, মাওলানা ইদ্রীস কান্দলভী, মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানভী এবং শায়খুল হাদীস মুহাম্মদ যাকারিয়া কান্ধলভীর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনার ইজাযত (অনুমতি) গ্রহণ করেন।

তাসাউফ

তিনি তার পিতার ইন্তিকালের পর আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর খলিফা শায়খ ডা. আব্দুল হাই আরিফীর হাতে বাইআত হন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ডা. আব্দুল হাই আরিফী মৃত্যুবরণ করেন। তখন তিনি আশরাফ আলী থানভি রহ.-এর আরেক খলিফা মাসীহুল্লাহ খান রহ.এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন।

কর্মজীবন

১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে দাওরা হাদিস সমাপনের পর থেকেই তিনি দারুল উলুম করাচিতে অধ্যাপনা করে আসছেন।

১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়া এ্যাপ্লাইট বেঞ্চের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

“মিজান ব্যাংক” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেন।

মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এর একজন স্থায়ী সদস্য। ৯ বছর তিনি আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন।

২০০৪ সালের মার্চ মাসে মাওলানা তাকী উসমানীকে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতি সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রি ইসলামী অর্থনীতিতে তাঁর অবদান ও অর্জনের কারণে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন।

বর্তমানে তিনি দারুল উলুম করাচীতে সহীহ বুখারী, ফিকহ এবং ইসলামী অর্থনীতির দরস দেন।

১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো আমলে পাকিস্তান ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি কর্তৃক কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার ব্যাপারে আলিমদের মধ্য হতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে হদ্দ,ক্বিসাস এবং দিয়ত সম্পর্কিত আইন প্রণয়নে তিনি অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেন।

১৯৬৭ সাল থেকে তিনি উর্দূ মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ এবং ১৯৯০ সাল থেকে ইংরেজি মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ ইন্টারন্যাশনালের প্রধান সম্পাদক পদে আছেন।

ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি আরবি,উর্দূ এবং ইংরেজি ভাষায় ষাটের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা। তার রচিত অধিকাংশ বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে।

তাঁর বর্তমান ব্যস্ততা

দারুল উলূম করাচির শায়খুল হাদিস ও নায়েবে মুহতামিম

চেয়্যারম্যন, আন্তর্জাতিক স্ট্যার্ন্ডাড শরীয়াহ কাউন্সিল, ইসলামিক অর্থনৈতিক একাউন্টিং ও পরিদর্শন সংস্থা, বাহরাইন।

স্থায়ী সদস্য, আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি , জেদ্দা ( ও আই সির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান)

চেয়্যারম্যন, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনোমিকস, পাকিস্তান (1991 থেকে)

রচনাবলী

আরবি রচনাবলী
تكملة فتح الملهم (মুসলিম শরীফের ব্যখ্যাগ্রন্থ)
بحوث فى قضايا فقهية معاصرة
أصول الإفتاء

ইংরেজি রচনাবলী
1. The Authority of Sunnah

2. The Rules of I’tikaf

3. What is Christianity?

4. Easy Good Deeds

5. Perform Salaah Correctly

6. The Language of the Friday Khutba

7. Discourse on the Islamic Way of Life

8. Sayings of Prophet Muhammad sallallahu alaihi wa sallam

9. The Legal Status of Following a Madhhab

10. Spiritual Discourses

11. Islamic Months

12. Radiant Prayers

13. Qur’anic Sciences

14. Islam and Modernism

15. Contemporary Fatawa

উর্দু রচনাবলী

ইসলাম আওর সিয়াসী নাযরিয়্যাত (ইসলাম ও রাজনৈতিক মতবাদসমূহ)
তাবসেরে (গ্রন্থ সমালোচনা)
জাহানে দীদাহ
দুনিয়া মেরে আগে
সফর দর সফর
তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন
আসান নেকিয়া
ইনআমুল বারি
ইসলাম আওর জিদ্দাত পসন্দি
ইসলাহি খুতুবাত
ইসলাহি মাজালিস
ইসলাম আওর সিয়াসাতে হাযেরা
আহকামে ই’তিকাফ
আকারিরে দেওবন্দ কিয়া হ্যায়
ইত্যাদি

সূত্র: উইকিপিডিয়া

 

 

 

পূর্ববর্তি সংবাদমশা নিয়ে ভাববেন কোনো মশাই?
পরবর্তি সংবাদআস্তানা বদলে হলো ‘নুর সুলতান’