নিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের উপর হামলা, খোদ নিউজিল্যান্ড সম্প্রদায়ও হতভম্ব!

মুহাম্মাদ শোয়াইব।।

নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা কত? এর আগে কি কখনো তারা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন? শুক্রবার নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর মুসলমানরা প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছেন। তারা হতভম্ব। নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত মুসলমানরা এখনো দিনটির ভয়াবহতা ভুলতে পারছেন না।

নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা শান্তিপূর্ণভাবে ইবাদত করে ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল হয়ে নিজেদের জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত।

নিউজিল্যান্ড ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র।। এটি কয়েকটি দ্বীপের সামষ্টিক একটি দেশ। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার স্থল সীমানার সংযোগ নেই। সম্পূর্ণই আলাদা। নিউজিল্যান্ডে ইসলামের আগমন একেবারেই সাম্প্রতিক।

পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে অবস্থানরত মুসলমানরা যখন ব্যাপকহারে হিজরত করতে শুরু করেন তখন তারা নিউজিল্যান্ডে আসতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেন।

এখানে বসবাসরত মুসলমানদের অনেকেরই জন্ম ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আলবেনিয়া, তুরস্ক, যুগোস্লাভিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও আরব অঞ্চলে। নিউ জিল্যান্ডের মুসলমানরা তিনটি অঞ্চলে বসবাস করে।

অকল্যান্ড অঞ্চল, বিশেষত অকল্যান্ড শহর ও উত্তর দ্বীপের দক্ষিণে খুব বেশি পরিমাণে বসবাস করে মুসলমান। দক্ষিণাঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রিস্টচার্চ শহরেও রয়েছে অনেক মুসলমান। বেশিরভাগ মুসলমান সাধারণ শ্রেণীর। তবে কিছু প্রশিক্ষিত পেশাদারও রয়েছেন।

নিউ জিল্যান্ডে প্রথম মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত ১৯৭০ সালে অকল্যান্ড শহরে। এই শহরে আরও প্রায় ১১ টি মসজিদ রয়েছে। এবং এই মসজিদের একটিতে ইমামতি করেন মিশরের মুস্তানবিরছ শহরের আল-আজহারের একজন ডিগ্রিধারী।

নিউজিল্যান্ডের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ইসলাম অন্যতম। ১৯৯১-২০০৬ এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ১.১% নাগরিক মুসলিম। নিউজিল্যান্ডে মোট জনসংখ্যা বর্তমানে ৪.৩ মিলিয়ন। সে হিসেবে প্রতি চার জন নাগরিকের মধ্যে একজন মুসলিম।

২০১৩ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা ৪৬১৪৯, যা ২০০৬ সালের আদমশুমারি থেকে ২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউজিল্যান্ড সরকারের হিসাবমতে, ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলমান অধিবাসী ছিল মাত্র ১৫০ জন। ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা উন্নীত হয় ২৬০-এ।

অভিবাসী মুসলমানদের বড় আকারে বসতি স্থাপন শুরু হয় ১৯৭০ সালে। সে সময় ফিজি থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন শুরু করে। তাদের অনুসরণ করে ১৯৯০ সালের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক দেশের উদ্বাস্তু মুসলমানরা পাড়ি জমায় নিউজিল্যান্ডে। এরপর থেকেই নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে এ দেশে এসেছেন, এমন অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেমও রয়েছেন দেশটিতে। তারা নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রচার ও সেখানকার মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৭৭% মুসলমান বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের অধিকাংশই ভারতীয়। অনুপাত হিসেবে মুসলমানদের মধ্যে ২৯% ভারতীয়, আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২১%। ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রেও মুসলমানরা এগিয়ে রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে তাদের আবাসস্থল ঘেঁষে মসজিদগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।

মসজিদসংলগ্ন কমপ্লেক্সে শিশুদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বেশি কিছু হিফজখানাও গড়ে উঠেছে। কয়েকটি মসজিদের উদ্যোগে ‘সানডে স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ছুটির দিন শিশুদের দিনব্যাপী ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় তাতে।

মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ হামলা তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করেছে। সন্ত্রাসী হামলা নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা কিছু ব্যক্তিগত নিপীড়নের শিকার হলেও নিউজিল্যান্ড সরকার সর্বদা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারা পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করে আসছিল। তবে মসজিদের মিনার থেকে মাইকে আজান দেয়া দেশের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

মুসলিম নারীরা শরয়ি পর্দার স্বাধীনতা উপভোগ করেন। রাস্তায়, জনসাধারণে এবং বাজারে হিজাব ও আবা পরিধান করে থাকেন।

তারা একবার সাবেক এমপি রিচার্ড প্রোসারের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি একটি স্থানীয় ম্যাগাজিনের কলামে মুসলিম যুবকদেরকে সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যায়িত করে কলাম লিখেছিলেন। তিনি মুসলিম যুবকদেরকে পশ্চিমা এয়ারলাইন্সে সফর করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার আহবান করেছিলেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সরকার এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

গতকাল যে নিষ্ঠুরতা দেখা গেছে, দেশটিতে ইসলামের প্রসারের পর এটাই প্রথম। এতে খোদ নিউজিল্যান্ড সম্প্রদায়ও ধাক্কা খেয়েছেন।

সূত্র: আল খলিজ অনলাইন

পূর্ববর্তি সংবাদঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তুচ্ছ ঘটনায় কিশোর নিহত
পরবর্তি সংবাদঅস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রীর