তিনি ছিলেন নির্বিরোধ, শান্তিপ্রিয়, ধর্মপ্রাণ মানুষ

শরীফ মুহাম্মদ ।।

নিউজিল্যান্ডে ‘খ্রিস্টান সন্ত্রাসী’র বর্বর বন্দুক হামলায় শহীদ প্রফেসর ড. আবদুস সামাদ ছিলেন একজন নীরব, শান্তিপ্রিয় ও দ্বীনদার-ধর্মপ্রাণ মানুষ। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে তার জীবন ও চলাচল ছিল প্রধানত তার ডিপার্টমেন্ট, বাসা ও মসজিদে। তিনি ছিলেন একজন নির্বিরোধ মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক রাজনৈতিক কিংবা শিক্ষকদের গ্রুপ কেন্দ্রিক কোনো উত্তেজনা ও হইচইয়ে তাকে পাওয়া যেত না।

ইসলাম টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে শহীদ ড. আবদুস সামাদের ছাত্র ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্বের শিক্ষক প্রফেসর ড. হাম্মাদুর রহমান এসব কথা বলেন।

মরহুম ড. আবদুস সামাদ ক্রাইস্টচার্চের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন ২০১৩ সালের দিকে। তিনি থিসিসও করেছিলেন নিউজিল্যান্ডেই। থিসিস করার আগে ও পরে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করতেন।

প্রফেসর ড. হাম্মাদ জানান, আমরা জানতাম- স্যারের ছেলেরা নিউজিল্যান্ডে লেখাপড়া করত এবং ওই দেশেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন যাপন করত। সন্তানদের লেখাপড়া ও জীবন গড়ার দাবি সামনে নিয়েই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে নিউজিল্যান্ডে চলে যান। তিনি খুবই চুপচাপ স্বভাবের দ্বীনদার একজন মানুষ ছিলেন। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, ক্রাইস্টচার্চের যে মসজিদটিতে বন্দুক হামলা করা হয়েছে- সেই আলনুর মসজিদে তিনি জুমার নামাজের আগে আজান দিতেন। মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। স্যারের ধর্মপ্রাণতার জীবনের সঙ্গে এ খবরটাকে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণই মনে হয়।

ড. আবদুস সামাদের ছাত্র ড. হাম্মাদ বলেন, সমগ্র দেশবাসী এবং পৃথিবীর সব মানুষের মতো আমরাও নিউজিল্যান্ডের এ মর্মান্তিক ও পাশবিক ঘটনায় মর্মাহত। বিশেষভাবে আমরা যারা স্যারের স্বজন ও ছাত্র- তারা স্যারের এই করুণ হত্যায় অনেক বেশি দুঃখভারাক্রান্ত। আমরা তার জন্য দোয়া করি- আল্লাহ তাআলা যেন তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। এবং তার পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করেন।

প্রফেসর হাম্মাদুর রহমান মরহুম ড. আবদুস সামাদের স্ত্রীর নিহত হওয়ার খবরটাকে ‘ছড়িয়ে পড়া ভুল খবর’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, স্যারের স্ত্রী এখন ক্রাইস্টচার্চের বাসায় সন্তানদের সঙ্গেই আছেন।

ড. হাম্মাদ তার ছাত্রত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কৃষিতত্ত্বের ওপর একটি ব্যবহারিক ক্লাসে ড. আবদুস সামাদ স্যারের ছাত্র ছিলাম। ৯০ সালের দিকের ঘটনা ছিল এটি। স্যারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল সুন্দর। চুপচাপ থাকা- ধর্মপ্রাণ এই মানুষটির সাথে সহজেই কথা বলতে পারা, মিশতে পারার সুযোগ হতো আমাদের।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাম্মাদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, মরহুম প্রফেসর ড. আবদুস সামাদ বিশেষভাবে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে কিংবা কোনো পীরসাহেবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি স্বাভাবিক পারিবারিক পরিবশে ও আলেম-ওলামাদের সঙ্গ থেকেই ধর্মপ্রাণতার জীবনে প্রবেশ করেছেন। ধর্মীয় সাধারণ সব পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তার বাড়ি ছিল কুড়িগ্রামে। পেশাগত কারণে সপরিবারে থাকতেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পূর্ববর্তি সংবাদমুসলিমবিদ্বেষী ব্রিটিশ লেখক মিলো অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ
পরবর্তি সংবাদ‘তোমরা আমার বন্ধু, তোমাদের নামাজের সময় আমি পাহারা দেবো’