ক্রাইস্টচার্চের এই জঙ্গিবাদ নিয়ে ট্রাম্পগোষ্ঠী কথা বলছে না কেন?

শরীফ মুহাম্মদ ।।

আজ শুক্রবার জুমার নামাযের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার আল নুর মসজিদ ও লিনউডের অপর একটি মসজিদে বন্দুক নিয়ে হামলা চালায় এক বর্ণবাদী, মুসলিমবিদ্বেষী সন্ত্রাসী। পশ্চিমা নেতৃত্ব ও মিডিয়ার জন্য হতাশাকর হলো, এই বর্ণবাদী উগ্র খুনিটি মুসলিম নয়। এ জন্য তারা ‘জঙ্গি’ তকমা লাগিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে গোটা দুনিয়ায় ‘রেড এলার্ট’ জারি করে দিতে পারেনি। চোখ-মুখ ফুলিয়ে চেহারাটাকে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়ে দেশে দেশে আতঙ্কজনক হুঙ্কার ও হম্বিতম্বি ছড়িয়ে দিতে পারেনি। বরং ঘটনার ৫/৬ ঘণ্টা পরও ট্রাম্পসহ অধিকাংশ পশ্চিমা নেতার কোনো প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায়নি।

নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এ ঘটনায় কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের নিন্দা, শোক ও প্রতিক্রিয়া এখনো গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি।

ক্রাইস্টচার্চের এই খুনি অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। উগ্রপন্থী খ্রিস্টান ও চরম মুসলিমবিদ্বেষী। যতদূর জানা গেছে, এ ঘটনায় এবং এ জাতীয় চিন্তায় সে একা একজন নয়। গোটা ইউরোপ-আমেরিকা জুড়েই এখন এমন বীভৎস খুনিদের একটা সশব্দ উত্থান ঘটে চলেছে। যারা গত ৭/৮ বছর ধরেই বিভিন্ন সময় নারকীয় সব হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এসেছে। পশ্চিমের ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ বাস্তব যুদ্ধ ও প্রচারযুদ্ধের সময়-সন্তান এরা। আক্রমণাত্মক মনস্তত্তের পরিস্থিতির ভেতর থেকে জন্ম নিয়েছে। এদের রক্তপিপাসা অনেক। এ জন্য এদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার শব্দ-বাক্য যেমন চতুর ও সীমাবদ্ধ, তেমনি টন কে টন বোমা বর্ষণকারী, হাজারো-লাখো মানুষের জীবন বিনাশকারী পশ্চিমা দেশের রাজা-উজিরেরা বাক্য ব্যয়ে কৃপণ হয়ে উঠেছেন। কখনো বন্দুকধারী, কখনো হামলাকারী, কখনো মানসিকভাবে অসুস্থ- এমন খেতাব দিয়ে ‘নিরীহ’ ও ‘নিঃসঙ্গ’ হামলার একটি চিত্র উপহার দিতে তারা ‘দক্ষতার’ কসরত করে যাচ্ছেন।

অথচ মুসলিম কোনো ব্যক্তির কোনো প্রতিরোধ কিংবা আত্মরক্ষামূলক সশস্ত্র তৎপরতার ঘটনা পেলেই দেশে-বিদেশে ‘ইসলামি জঙ্গিবাদ’, ‘সন্ত্রাসী’, ‘টেররিস্ট’, ‘মিলিট্যান্ট’ শব্দের ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসের সরলিকরণ ও ধর্মীয়করণে সচেতনতার বন্যা ছুটিয়ে দেন। উল্টোদিকে ক্রাইস্টচার্চের খুনি এবং খুনির পেছনের খুনিদের ব্যাপারে তারাই দেখুন, শব্দহারা। এই খুনি এবং খুনির গোষ্ঠী সংজ্ঞায়ন ও চিত্রায়নে তারা শব্দ-বাক্যের নিঃস্ব ও এতিমে পরিণত হয়ে যান। এত সংযম তাদের আর কখনো দেখা যায় না।

এমন ঘটনা কেন ঘটতে শুরু করেছে? রক্তস্নাত এমন ঘটনার বর্ণনা ও চিত্রায়নে এমন কৃপণতা ও নিঃস্বতা কেন ঘটছে? এসব প্রশ্নের উত্তর বুঝতে অস্ত্রবণিক ‘বুদ্ধিজীবী’ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সরল অঙ্ক, প্রাতিষ্ঠানিক বড় সন্ত্রাসী তো অপ্রাতিষ্ঠানিক ছোট সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পারে না। আকাশের সন্ত্রাসী তো মাটির সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পারে না। বোমার সন্ত্রাসী তো বন্দুকের সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পারে না। অবিচার ও জুলুমের মিছিলে তারা কেউ সামনে, কেউ পেছনে- এই যা পার্থক্য। এ জন্যই ক্রাইস্টচার্চের উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী ও সন্ত্রাসীকে নিয়ে কথা বলতে তারা ইঞ্চি-ফিটের ফিতা নিয়ে বসছেন। তারপর মেপে মেপে কথা বলবেন। পৃথিবী দেখবে এক ‘অসুস্থ বন্দুকধারী’র বিরুদ্ধে দুনিয়ার তাবত শাসকেরা বড়ই সতর্ক ও সচেতন আছেন! তাদের কোনো অবহেলাই পাওয়া যায়নি!!

এই অক্ষম দুঃখলেখা যখন আপ (প্রকাশ) হবে- তখন, কিংবা তার কিছু ঘণ্টা পর, কিংবা দিন খানেক পর হয়তো সাদা ভবনের মালিকেরা দু-একটি গোছানো শব্দের একটি নিয়ন্ত্রিত ও ভাবগাম্বীর্যপূর্ণ প্রতিবাদ করতেও পারেন। পারেন শান্তির জন্য দু-চার বাক্যের একটি কৃপণ ব্যবস্থাপত্র দিয়েও দিতে। তখন আর কি! বোমায় ও বন্দুকে ঘরে ঘরে আর মসজিদে রক্তলাল লাখো মানুষ সে শব্দ-সান্ত্বনায় ‘সুখী’ হয়ে উঠবেন। মোড়লেরা দায়ও সারবেন, সাপও পালবেন। আমরা দূর থেকে হাত-পা বাঁধা অকর্মা দর্শকের ভূমিকা পালন করেই যাব।

পূর্ববর্তি সংবাদনিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ
পরবর্তি সংবাদনিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত হামলা হয়েছে: আল্লামা আহমদ শফী