বালাকোটের মুজাহিদদের বুকে ধারণ করে আছে পাকিস্তানের যে দুর্গ

আবরার আবদুল্লাহ ।।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের জাহলামে অবস্থিত রুহতাশ দুর্গটি তার নির্মাণ শৈলী ও কৌশলগত অবস্থানের জন্য বিশেষভাবে আলোচিত ছিলো এতোদিন। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে ঐতিহাসিক বালাকোটের স্মৃতি ও ইতিহাস।

পনের শতকে নির্মিত রুহতাশ দুর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও নির্মাণ কৌশল আধুনিকযুগের প্রকৌশলীদেরও বিস্মিত করে। শত শত বছর পূর্বে দুর্গম পাহাড়ের উপর তা কীভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিলো তা তাদের চিন্তার অতীত। চারশো হেক্টর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই দুর্গটি পাকিস্তানের প্রাচীন দুর্গগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ। বিখ্যাত মুসলিম শাসক শের শাহসুরী দুর্গটি নির্মাণ করেন।

এক নজরে রুহতাশ দুর্গ

সম্প্রতি এই দুর্গের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ঐতিহাসিক বালাকোটের নামও। আর তাতে দুর্গটি নিয়ে নতুন আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানের ইতিহাসবিদদের। পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ মির ফখর ইসলাম দাবি করেছেন, বালাকোটের ময়দানে হজরত সাইয়েদ আহমদ শহিদ রহ.-এর শাহাদাতের পর তার একদল অনুসারী আশ্রয় নিয়েছিলেন এই পরিত্যাক্ত দুর্গে। শিখদের প্রচণ্ড আক্রোশের হাত থেকে বাঁচতে তারা এখানে আত্মগোপন করেছিলেন। দুর্গের দেয়াল ঘেঁষে যে কয়েকটি অপরিচিত কবর রয়েছে সেগুলো বালাকোট ফেরত মুজাহিদদের-ই বলে ধারণা তার।

Related image
মূল ভবনের সিড়ি

তিনি আরও দাবি করেন, বালাকোটের ময়দানে চূড়ান্ত পরাজয়ের পূর্বেই শিখরা দুর্গটি ধ্বংস করে দেয় এবং পরবর্তীতে মুজাহিদরা এখানে এসে আশ্রয় নেন। তারা এখানে দীর্ঘদিন আত্মগোপন থাকেন।

তবে দাবি যদি সত্যও না হয়, তবে এই দুর্গের সঙ্গে উলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার নির্মাণকাল থেকে। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী শের শাহসুরী একজন বিশিষ্ট বুজুর্গের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রাখতেন। বাদশাহ যখন মোগল ও শিখদের হামলার আশঙ্কায় অস্থির হয়ে ওঠেন তখন এখানেই দুর্গ নির্মাণের নির্দেশ দেন সেই বুজুর্গ এবং নির্মাণ সামগ্রির সঙ্গে নিজের একটি পোশাক মিশিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।

বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত পুকুর

শের শাহসুরী তার নির্দেশ মতো এখানে দুর্গ নির্মাণ করেন। দীর্ঘ সাত বছর (১৫৪১-১৫৪৮) পর্যন্ত ৩ লাখ শ্রমিক এই দুর্গ নির্মাণের কাজ করে। শের শাহসুরীর আগ্রহে সমকালীন বুযুর্গরা শ্রমিকদের সঙ্গে নির্মাণ কাজে হাত লাগাতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বুজুর্গদের স্পর্শ দুর্গের মর্যাদা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। তাদের কারো কারো কবর দুর্গের ভেতর সংরক্ষিতও আছে। দুর্গের প্রতিটি দরজায় কোনো না কোনো বুজুর্গের কবর রয়েছে। ভেতরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের একাধিক কবর।

সমকালের সর্ববৃহৎ এই দুর্গে ছিলো বাসভবন, রাণীমহল, বাগান, গবেষণাগার, শাহী মসজিদ, লঙ্গরখানা, কূপ, পুকুর ও বিশাল সেনা ছাউনি যাতে ৬০ হাজার সেনা অবস্থান করতে পারতো।

Related image
রাণী মহলের ধ্বংসাবশেষ

মোগল সম্রাট হুমায়ুনের কাছে পরাজিত হয়ে ইরান পালিয়ে গেলে এই দুর্গটি মোগলদের হস্তগত হয়। হুমায়ুন প্রথমে তা ধ্বংসের নির্দেশ দিলেও পরবর্তীতে তা পুনঃনির্মাণের নির্দেশ দেন। তবে দুর্গটির চূড়ান্ত ক্ষতিসাধন করে শিখসেনারা। তাদের হাতেই ঐতিহাসিক এই দুর্গটি ধ্বংস হয়।

পাকিস্তান সরকার এই ঐতিহাসিক স্থাপনকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কারমূলক কিছু কাজও হয়েছে। তবে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত এই দুর্গের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্ভব হয়নি।

সূত্র : উইকিপিডিয়া ও ডেইলি পাকিস্তান

পূর্ববর্তি সংবাদচাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পাঁচ পরিবারের সবকিছু পুড়ে গেছে আগুনে
পরবর্তি সংবাদডাকসু: রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ