শেষবেলার বইমেলা: সুখ-দুঃখের কড়চা

সাদ আবদুল্লাহ মামুন ।।

বইমেলা ২০১৯। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাভাষীদের বইউৎসব। রাজধানীর বুকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলতে থাকে। ধীরে ধীরে এখন সেটি শেষের দিকে। বইমেলাকে ঘিরে সারা বছরজুড়ে থাকে হরেক রকম আগ্রহ ও অপেক্ষা। লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের। লেখক আশায় থাকেন মেলায় তার বই প্রকাশিত হবে। পাঠক প্রতীক্ষায় থাকেন নতুন নতুন বই পাবে। লেখক ও পাঠকসমাজের কাছে তাই ফেব্রুয়ারি আশা ও অপেক্ষার মাস।

গত বছরগুলোর তুলনায় এবারের বইমেলার কিছু কিছু বিষয় ছিল স্বস্তিদায়ক। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা ঘোরাফেরা করা গেছে এবারকার বইমেলায়। কথিত ‘সাম্প্রদায়িকতা’ কিংবা সন্দেহের অভিযোগে এবারের মেলা থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। শোনা যায়নি হয়রানি-হেনস্থা করার বড় ধরনের কোনো সংবাদ। এবারের বইমেলার এটা ছিল একটা ভালো দিক।

তা ছাড়া নামায পড়ার জন্য এবারের বইমেলায়ও করা হয়েছে সুন্দর ব্যবস্থাপনা। আগের চেয়ে নামাযঘরের জায়গা প্রশস্ত ও সুন্দর। এ বিষয়টিও মেলায় যাওয়া মানুষের কাছে ভালো লেগেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার যাত্রাবাড়ি জামিয়াতুল মাআরিফের শিক্ষক মাওলানা নকীব বিন মুজীব।

ফেব্রুয়ারি এলেই বরাবর একটা বিষয় দীনদার, ধর্মপ্রাণ পাঠকদের ব্যথিত করে- ইসলামি বই কিনতে না পারা। বইমেলায় ইসলামি প্রকাশনীগুলোকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার কষ্টটা জনে জনে ছড়িয়ে পড়ে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ইসলামি প্রকাশনীর মালিক জানিয়েছেন, প্রতিবছর বইমেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য তারা সবরকম চেষ্টা করে আসছেন। তাদের বইয়ের প্রতি মানুষের তুমুল আগ্রহও রয়েছে। তার পরও তাদের সুযোগ দেওয়া হয় না। এবারের বইমেলার সঙ্গেও এই অভিযোগটা রয়ে গেছে। এভাবে বছরের পর বছর বইমেলা থেকে পাঠকদেরকে ইসলামি বই কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার এ দায় কার- কে বলবে?

দুই-একটা ইসলাম নামধারী প্রকাশনীকে অনুমতি দেওয়ার খবর জানা গেছে। যেমন হিযবুত তাওহিদ। এটা যে ইসলামি প্রকাশনী নয়, বরং ইসলামবিদ্বেষী এটা কমবেশ অনেকেরই জানা। রহস্য ও প্রশ্ন তৈরি হয় তখন।

ডেমরার অধিবাসী আবু মুআজ বলেছেন, ইসলামি লেখকদের বইপত্র সাধারণত বইমেলার অপেক্ষায় থাকে না। বরং বছরের বারো মাসই প্রকাশিত হয়। তার পরও সাহিত্যের কিছু বইপত্র একুশের বইমেলাকে উপলক্ষ করে প্রকাশ করার চেষ্টা ও আয়োজন থাকে। প্রতিবছরের মতো এবারও হয়েছে কিছু। কিন্তু এসব বই ‘সাম্প্রদায়িক’ দৃষ্টির কোপাণলে পড়ে যায়। তারা ইসলামি বইপত্রের প্রকাশ যে ভালোভাবে নেয় না- তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেছে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২। ইসলামকে বিষয় করে লেখা বইটি ঠুনকো অজুহাতে সম্প্রতি বইমেলায় নিষিদ্ধ করা-না করার ঘটনা পাঠকসমাজকে এক রকম লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।

কমলাপুর মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল ফযল জানিয়েছেন, বইমেলায় দিন দিন ইসলামপ্রিয়দের, মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের যাতায়াত বাড়ছে। বই কেনাকাটা ও পড়াশোনায় অন্যদের তুলনায় তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। এবং তাদের মান ও সংখ্যাটা যে মোটেও কম নয় এটা আজ প্রগতিশীল লেখক-সাংবাদিকরাও স্বীকার করে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

তার পরও ধর্মীয় পোশাকের কারণে বাঁকাদৃষ্টি কিংবা খানিকটা উপেক্ষার শিকার হওয়ার কথা সামনে আসছে বলে জানিয়েছেন বইমেলায় ঘোরা কেরাণীগঞ্জের আবদুল্লাহ ওবায়দি। এ দেশের ইসলামি প্রকাশনী এবং বিপুল পরিমাণ ধর্মপ্রাণ লেখক-পাঠকের এ সমস্যা ও সংকটগুলো নিরসনে সামনের দিনগুলোতে বাংলা একাডেমি আন্তরিক ও আগ্রহী হবে-এ দাবি ইসলামপ্রিয় লেখক-পাঠকদের।

আরও পড়ুন : বৃষ্টিভেজা শেষবেলার বইমেলা 

পূর্ববর্তি সংবাদবাড়ছে ইউটিউবের প্রভাব, আলেমদের উপস্থিতি কেমন হওয়া উচিত?
পরবর্তি সংবাদআশুলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা, পুলিশের এসআই নিহত