এগুলোকে বলে ‘ট্রায়াল বাই মিডিয়া’

আলী রীয়াজ ।।

আপনার হাতে মিডিয়া আছে – গণমাধ্যম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া – আপনি তাই দিয়েই বিচার করছেন, যার হাতে রাষ্ট্র সমর্থিত অস্ত্র আছে সে বিচার করছে অস্ত্র দিয়ে, কয়েকজন একত্র হয়ে একজনের বিরুদ্ধে শক্তি দেখানোর সুযোগ মিলেছে তারা সেটাই করছেন ওই ব্যক্তির ওপরে।

এগুলোকে বলে ‘ট্রায়াল বাই মিডিয়া’, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মব জাস্টিস বা পিটিয়ে হত্যা। আর তার সঙ্গে যদি মিডিয়া ট্রায়ালকে বেশ ‘রসালো’ করা যায় তাহলে আর এই সুযোগ কে ছাড়ে; যদি বিচারবহির্ভূত হত্যাকে রাষ্ট্রের স্বার্থে, দেশপ্রেম বা সমাজ রক্ষার হাতিয়ার বলে দাবি করা যায় তবে তাকে সমর্থন করার লোকের অভাব হয় না; পিটিয়ে হত্যার জন্যে যদি আক্রান্তকে অপরাধী বলে একবার উঁচু গলায় বলতে পারেন তা হলেই হল। এগুলো কি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়? এগুলো একই ধরণের বিষয় – নাগরিকের বিচার পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার উপায়, সকলের সমতার ধারণা না থাকার বিষয় এবং উগ্রপন্থা অনুসরণের বিষয়।

‘ট্রায়াল বাই মিডিয়া’র উদাহরণ তো প্রতিদিনের ঘটনা। কে কী বলেছে তার সঙ্গে আরেকটু রং চড়িয়ে দশজনকে জানান দিন। প্রমাণ না থাকুক আপনার রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি হবে অতএব হেনস্থা করুন। কে কীভাবে নাগরিকের কোন অধিকার হরণ করে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তার ব্যক্তিগত আপালচারিতা জোগাড় করেছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে, তাকে চ্যালেঞ্জ না করে বরঞ্চ ওইসব অডিও/ভিডিও টেপ কিংবা বর্ণনা তথ্য, সংবাদ বলে প্রচারের কাজে নেমে পড়ার ঘটনার বিষয়ে তো বিস্তারিত বলার দরকার হয় না।

আমরা একটাতে অংশ নিয়ে অন্যটাকে বৈধতা দিচ্ছি; আপনি যদি বিচার বহির্ভূত হত্যার বিরোধী হন তবে আপনাকে মিডিয়া ট্রায়ালের বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে, আপনাকে পিটিয়ে হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। এখানে সিলেক্টিভ হওয়ার সুযোগ আছে, কিন্ত সেটা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য; একটা বিচার-বভির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে কিন্তু আরেকটার পক্ষে যেমন আপনি হতে পারেন না, তেমনি আজকের মিডিয়া ট্রায়ালের বিরুদ্ধে কিন্তু আগামীকাল আরেক ঘটনায় পক্ষে তাও অনৈতিক। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি-আমি একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থান থেকে এই সবগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমার কথাগুলো মনে হবে স্বার্থ প্রণোদিত বা চমকদারির লোভ-প্রসূত।

আর যদি নিতান্তই স্বার্থপরভাবে বিবেচনা করেন তবে বলি, আজকে আপনি মিডিয়া ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন কালকে আপনিই যে তার ভিক্টিম হবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, দুর্ভাগ্য হলে আপনি হয়তো অন্য যে দুটি বিষয় বললাম তারও শিকার হতে পারেন। আমি আশা করি আপনি তা হবেন না ।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক

পূর্ববর্তি সংবাদহারামের পয়সা খেয়ে লাভটা কী: ভূমিমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদভোলায় মুয়াজ্জিনের লাশ উদ্ধার