ডাকসুর সঙ্গে কেন এই ধর্মবিদ্বেষের ভূত!

আবু তাশরীফ ।।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নাম ডাকসু। ৯০ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন হয় না। আমান উল্লাহ আমান ছিলেন ডাকসুর সর্বশেষ ভিপি। সেই ডাকসু নির্বাচন নিয়েই আবার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে বড়লোকি বাণিজ্য ও ঠিকাদারি কারবারের রমরমা চলছে এখন। নির্বাচন নামক জিনিসটারও ১২টা বেজে গেছে এরই মধ্যে। সেই সময়ে এই ডাকসু–চাকসু কোনো আলোচনার বিষয় হওয়ারই কথা ছিল না। কিন্তু ডাকসুর বাদ্যবাজনার মধ্যেই একটি খবর সবার চোখে টেনে আনা হয়েছে।

সে খবরটা দেখে মনে হয়েছে, ডাকসুর নামে ঢাবি ক্যাম্পাসকে আবার ‘শাহবাগ’ বানানোর চেষ্টাটা জোরদার হচ্ছে। ‘নাস্তিক ব্লগার কবলিত’ শাহবাগে এক পর্যায়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়েছিল।বাম ছাত্র সংগঠনগুলো সেখানে ছিল খুবই সক্রিয়। ডাকসু পর্বে এসে প্রশ্ন জাগলো, পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কি তবে শাহবাগী ভূতেদেরই অভয়ারণ্য রূপেই গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে?

খবরটি কী ছিল? খবরটি ছিল- ডাকসুর পরিবেশ পরিষদের সভা হয়। সে সভায় দাবি জানানো হয়েছে, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।’ ছাত্রলীগ ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর এ দাবির সঙ্গে আবার সহমত জানিয়েছে বিএনপির ‘কোমর ভাঙ্গা’ ছাত্রদলের নেতারাও। ছাত্রদলের প্রগতিশীল হওয়ার ‘ঠেলাটা’ এবার বুঝুন!

এরই মধ্যে ঘটেছে আরেকটি ঘটনা। একটি ইসলামী ছাত্র সংগঠন ডাকসু নির্বাচনে তাদের অংশ নিতে দেওয়ার দাবি জানিয়ে মিছিল করেছে ঢাবি ক্যাম্পাসে। না, তারা ছাত্রশিবির ছিল না, তাদের পরিচয় ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। সেই মিছিলটি নিয়ে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলেছে। তারা দাবি করেছে- এ মিছিল তাদের হতবাক করেছে। ধর্মভিত্তিক কোনো দল না কি ঢাবি ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবে না।’ তাদের আরো দাবি- ‘ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত। এই সকল সংগঠন ক্যাম্পাসের গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থী ওশিক্ষকেরা কখনোই গ্রহণ করেনি।’

বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর পোশাকি নাম : প্রগতিশীল ছাত্রজোট। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট(মার্কসবাদী বাসদ সমর্থিত), বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ও ছাত্র ঐক্য ফোরাম নিয়েই এই জোট। এই সব বাম ছাত্র সংগঠন ও তাদের পিতা-সংগঠনের মূল কাজ কী এই দেশে- কেউ কি জানেন? এরা সাম্য বা সমাজতন্ত্রের কোন্ মূল্যবোধটা চর্চা করছে এখানে? গত তিন যুগ ধরে এদের তো শুধুই ধর্ম (ইসলাম) বিদ্বেষের নানা উপলক্ষ নিয়েই কাজ করতে দেখা যায়। পুঁজির অসৎ ব্যবহার, সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন আর লুটেরা রাজনীতি নিয়ে এদের শরীরে কোনো ব্যথা-বেদনা নেই। এসব বাম ছাত্রসংগঠন সাম্রাজ্যবাদের দাসত্ব ও ক্ষমতার হালুয়ারুটিতে মুখ ঝুলিয়ে লাল রাজনীতির নামে প্রতিবন্ধীর মতো ইসলাম বিদ্বেষী কিছু খোঁড়া নাচানাচি ছাড়া আর কী উপহার দিয়েছে ছাত্র রাজনীতিতে? দেশজুড়ে ও ক্যাম্পাসে এদের কয় ডজন ভোট? এরা টুপি- পাঞ্জাবি পরা ছাত্রদের মুখে নারায়ে তাকবীরের শ্লোগানটুকু সহ্য করতে পারছে না।

৮৫% মুসলিমের দেশে এ জাতীয় ধর্মবিদ্বেষী বাম রাজনীতি বন্ধের দাবি জোরদার করা উচিত কি না– এটা নিয়েই এখন অনেকে ভাবছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে বিদ্বেষী–ঘৃণাবাদী বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সব রকম তৎপরতা বন্ধের দাবিও তো হতে পারে সমতা ও ন্যায়নুগতার দাবি। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এ দেশের মুখ থুবড়ে পড়া রাজনীতিরি মধ্যে ক্র্যাচে ভর দিয়ে বামেরা নতুন যে সব পায়ঁতারার রাজনীতির দূষণ তৈরি করতে চায়– তা ফেরাতে না পারলে দেশবাসীর কপালে আরো দুঃখ আছে!

ডাকসু কিংবা ডাকসু নির্বাচনের কী হবে- জানার কোনো আগ্রহই নেই। কিন্তু ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে অবশ্যই কথা আছে। এমন স্বৈরতান্ত্রিক ও জাতিদ্রোহমূলক দাবি উঠানোর সাহস বাম ছাত্রসংগঠনগুলির কোত্থেকে আসে- এটা দেশবাসীর দেখা প্রয়োজন। এক ডাকসুতে যদি এ রকম দাবি বাস্তবায়িত বা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়- এরপর দাবি তোলা হবে, সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ করতে হবে! তার পরের ধাপটি যদি এমন হয় যে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ম চর্চা করা যাবে না, হিজাব-টুপি–পাগড়ি পরা যাবে না, প্রকাশ্যে নামাজ পড়ার সুযোগ থাকবে না– তাহলে আমরা অবাক হবো না। ‘ডাকসু কিংবা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি’ শব্দবন্ধ শুনেই পিছিয়ে যাওয়ার কিছু নেই। যারা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে- ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ- কোনো জায়গাতেই তারা ধর্মের (ইসলাম) প্রবেশ ও চর্চা অনুমোদনযোগ্য মনে করে না। এদের চুলকানি সব জায়গায়, শুধু ক্যাম্পাসে নয়।

সুতরাং বিকলাঙ্গ রাজনীতি ও রূপকথার নির্বাচনের এই যুগে ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের’ দাবির মতো নৈরাজ্যবাদী–আগ্রাসী দাবিকে সরলভাবে দেখার কিছুই নেই। এদের মতলব বেশ প্রলম্বিত।মওকা পেলেই এরা হাত ঠেলে দেয়। সাম্রাজ্যবাদের কথিত ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধীতা’র সঙ্গে বাম রাজনীতির দাসদের সংহতির দুর্গন্ধ থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে সক্রিয় হওয়া দরকার সব মহলের।

না, এটি শুধু ইসলামী ইস্যু নয়। সব দল-মত (বামছাড়া) ও পেশার মানুষেরই ভাবা উচিত – এ জাতীয় ধর্মবিদ্বেষী দাবির পরিণতি নিয়ে। ছাত্রদলের মতো আদর্শপ্রতিবন্ধী ও আধানির্বোধ রাজনীতির ধারকদের সুরে ‘হয় হয়’ করে গেলে আখেরে এক মহা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বিশ্বাসিক পতনের সন্ধ্যা দেখতে হবে আমাদের সবার।

পূর্ববর্তি সংবাদপ্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতে সাড়া নেই ঐক্যফ্রন্টের
পরবর্তি সংবাদউল্টো পথে গাড়ি যেতে না দেয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে বেধড়ক মারধর