সেনাবাহিনী নামার পর যা হতে পারে : ইসলামি রাজনীতিকদের অভিমত

আতাউর রহমান খসরু ।।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৬ দিন বাকি। এখনও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বিরোধী দলগুলো। তারা বলছে, সরকার দলীয় লোকজন তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে দিচ্ছে না। তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আইন-শৃংখলা বাহিনীও সরকারি নেতা-কর্মীদের মতোই বৈরী আচরণ করছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল সেনাবাহিনী মোতায়েন করা। আজ মধ্য রাত থেকেই সারা দেশে সেনা মোতায়েন করার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে তারা। সেনাবাহিনীর মোতায়নে বিরোধী রাজনীতিকরা ব্যাপকভাবে আশাবাদী হলেও কিছু ‘কিন্তু’ থেকে গেছে কারও কারও মনে।

কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো ম্যাজিস্ট্রেসি বা বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের দাবি জানালেও সেনাবাহিনীকে সে ক্ষমতা দিয়ে নামানো হচ্ছে না। বরং বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। সেনাবাহিনী বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইন-শৃংখলা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তারা সহায়তা করবেন।

তবুও সেনাবাহিনী নিয়োগের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেই আশা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ প্রায় সব বিরোধী পক্ষই সেনাবাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু কেন? বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার -আমরা মনে করি- এখন পর্যন্ত তা নেই। আমরা এবং দেশের জনগণ আশা করে সেনাবাহিনী মাঠে নামলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্ব শর্ত নিরপেক্ষ পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ, সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের সেই আস্থা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবতা হলো এখনও নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ কোথাও নেই। সব প্রার্থী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। অন্যান্য বাহিনী কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে না। কিন্তু মানুষ মনে করে, নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। তারা কোনো পক্ষপাতিত্ব করবে না।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদও সেনাবাহিনীর প্রতি একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে সেনাবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় তারা জনগণের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে এই নেতার।

তিনি বলেন, ‘অতীতে জাতির দুর্দিনে সেনাবাহিনী যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তাতে তাদের অবস্থান নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতে চাই না। তবে এ নির্বাচনে তাদের কতোটুকু সুযোগ দেয়া হবে, তাদের কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাটাই তো দেয়া হয়নি। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দায়ও জড়িয়ে আছে বিষয়টির সাথে।’

তবুও সেনাবাহিনীর কাছে একটি আশাব্যঞ্জক ভূমিকা প্রত্যাশা করে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, ‘তবুও সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। কারণ, তারা যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করে -আশা করি- তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষ হবে না। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে। আমরা তাদের কার্যকর তৎপরতা প্রত্যাশা করছি।

তাহলে আপনাদের দাবি কি ছিল?’ অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনীকে নিয়োগ দেয়া হোক। কিন্তু তা দেয়া হয়নি। এখন নির্বাচন কমিশন যদি তাদের ব্যারাকে রেখে দেয় তবে পরিস্থিতির উন্নতি কীভাবে হবে?’

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা পালনের সুযোগ দিন। যারা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে, আতঙ্ক তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে কাজ করার সুযোগ দিন। যাতে মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে এবং স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’

সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া না হলেও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবে না নামলেও আমরা মনে করি, সেনাবাহিনী আন্তরিক হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা অসম্ভব হবে না। এবং তারা তাই করবে। ইনশাআল্লাহ!

পূর্ববর্তি সংবাদহাজারে-হাজারে, লাখে-লাখে মানুষ ভোট দিতে আসবে: জাফরুল্লাহ চৌধুরী
পরবর্তি সংবাদশেখ হাসিনা জোর করে জিততে চায় : আ স ম আবদুর রব