ইট-পাথরে সবুজায়ন

শাহ মুহাম্মদ খালিদ ।।

পরিবেশ দূষণ, শব্দদূষণ, আরো নানা রকম দূষণে অতিষ্ঠ নগরবাসী। দূষিত পরিবেশ ঢাকা শহরের অন্যতম একটি নাগরিক সমস্যা। ইট পাথর আর কংক্রিটের এই শহরে সামান্য মাটির খোঁজ পাওয়াই যেখানে কঠিন সেখানে গাছের অস্তিত্ব আরো কাল্পনিক ব্যাপার। নগর কর্তৃপক্ষ সড়ক দ্বীপগুলোতে বহু খাঁচা আর বেড়া লাগিয়ে যেগুলো বড় করেছে সেগুলোরও ত্রাহি অবস্থা। প্রতিটা গাছের পাতায় পাতায় ময়লা আর ধুলোবালির আবরণ জমে আছে। ফলে আমাদের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে গাছগাছালি থেকে যে অক্সিজেন ফেরত পাওয়ার কথা সেটা আমরা পাই না। ফলশ্রুতিতে বিরূপ আবহাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে হয় আমাদের।

এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে ঢাকার বাড়ি ঘরের ছাদের বনায়ন। বাসা বাড়ির ছাদে ফুল ফল ও শাক সবজির নানা রকম গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে উৎসাহী হচ্ছে মানুষ। বাড়িওয়ালা অথবা ভাড়াটিয়া অবসরে যখন ছাদে যান সেখানকার ফুল গাছগুলো তাদের সেই অবসরকে আরও মোহময় করে তোলে। সৌখিন মানুষেরা বাসার ছাদে ফুল গাছের পাশাপাশি ফল ও শাক সবজির গাছ লাগিয়ে থাকেন। এতে করে পরিমাণে কম হোক বা বেশি হোক নিজ হাতে লাগানো নিজ পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা গাছের ফরমালিনমুক্ত ফল ও শাকসবজি খাওয়া সম্ভব হয়।

ছাদে লাগানো ছবেদা

কী লাগাবেন ছাদে?
ছাদ বা বারান্দায় সাধারণত কলমের চারা লাগানো হয়। লেবু, কমলা, ডালিমের পাশাপাশি আমড়া, লিচু, আম, স্ট্রবেরি, পেয়ারার মত ফলগাছ বিশেষ খাটুনি ছাড়াই পরিচর্যা করা যায়। মৌসুমে যখন ফল আসে তখন গাছের পরিচর্যাকারির হৃদয়ে ঢেউ ওঠে আনন্দের। ভেতর থেকে কে যেন নজরুলের কথাগুলো গুন গুন করে গাইতে থাকে— আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মোর চোখ হাসে মোর বুক হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে।…

এখন শীতকাল। বাহারি ফুলের ভর মৌসুম। আমরা যত রকম ফুলের নাম জানি তার প্রায় সিংহভাগই নার্সারিতে পাওয়া যায়। এবং সবগুলোই ছাদে, বারান্দায় কিংবা বাসার সামনে গেটের দু’পাশে খালি যে জায়গাটুকু থাকে সেখানে লাগানো যায়। ফলগাছে ফল আসতে সময় লাগলেও ফুলগাছে ফুল আসে অতি দ্রুত। উপরন্তু নার্সারিতে ৩০ টাকা থেকে ১০০ টাকার ফুলগাছে ফুল ফুটেই থাকে। আপনি কেবল কিনে এনে টবে বসিয়ে দেবেন।

ছাদের গাছে কমলা

বৈকালিক বা সান্ধ্য অবসরে এক মগ কফি নিয়ে চলে যেতে পারেন ছাদে, যেখানে আপনি সাজিয়ে রেখেছেন মনের মত করে ছোট্ট একটা ছাদবাগান। মহান আল্লাহর অপূর্ব কুদরত ভেসে ওঠবে আপনার চোখের তারায় যদি গাছের পাতার কোণে জমে থাকা সামান্য শিশির বিন্দুটিও আপনি একটু মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে শুধু দু’পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু”।

তাই কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে মাঝে মধ্যে একটা-দু’টো গাছ কিনে আনুন। একটু পরিচর্যা করুন। কয়েকদিনেই অনুভব করবেন, গাছগুলো আপনার আপন হতে চলেছে। চারাগুলো যেন একেকটা শিশু, যাদের সাথে গড়ে উঠেছে আপনার মমতার বন্ধন। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে যারা আপনাকে দূষণমুক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে যাচ্ছে অবিরাম।

পূর্ববর্তি সংবাদসার্বিয়ায় ট্রেনের সঙ্গে স্কুলবাসের সংঘর্ষে নিহত ৫
পরবর্তি সংবাদপ্রধানমন্ত্রীর বাসভবনকে বিশ্ববিদ্যালয় বানালেন ইমরান খান