ইশতেহারে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহারে বেজায় খুশি ড. জাফর ইকবাল

আবরার আবদুল্লাহ ।। 

আজ দেশের একাধিক গণমাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আলোচিত লেখক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের একটি মন্তব্য-কলাম প্রকাশিত হয়েছে। কলামে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘোষিত ইশতেহারের ওপর নিজের ভালোলাগা ও মন্দলাগা নিয়ে কথা বলেছেন।

লেখক তার লেখায় আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী দলগুলোর ইশতেহারে প্রতি যেমন মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন, ঠিক তেমনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের প্রতি। বাম দলগুলোর ইশতেহারের প্রতি চরম মুগ্ধতা প্রকাশ করে তিনি লেখার শেষে বলেছেন, ‘ইশতেহারের শেষে নির্বাচনি ইশতেহার পড়ার মাঝে এত আনন্দ কে জানতো?’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবির ইশতেহারের প্রমংসা করে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনি ইশতেহারে আদিবাসীদের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশের এই মানুষদের বোঝানোর জন্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নামে একটা অসম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তাই যখন কোথাও তাদের আদিবাসী হিসেবে সম্বোধন করা হয় আমি দেখে আনন্দ পাই।’

পরের প্যারায় তার কথা- ‘ওয়ার্কার্স পার্টিও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী না বলে তাদের জন্য আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করে।’

লেখক তার আনন্দের যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন তার প্রথমেই রয়েছে দুটি বামপন্থী দলের ইশতেহারে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার। অথচ ‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধান পরিপন্থী হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

গত ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে তথ্য অধিদফতর থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাদের (পিআরও) কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বা নৃ-গোষ্ঠী বলে অভিহিত করা হয়েছে। দেশে বসবাসরত বিভিন্ন উপজাতীয় সম্প্রদায়কে কোনো অবস্থাতেই ‘উপজাতি’র পরিবর্তে ‘আদিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ না করার বিষয়ে সংবিধানে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

সাথে সাথে গণমাধ্যমে সংবিধান পরিপন্থী ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার বন্ধে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে।

আদিবাসী শব্দের ব্যবহার বন্ধের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠিকে আদিবাসী বলা হলে অন্যান্য জাতিসত্ত্বার প্রতি অসম্মান দেখানো হয়। তাছাড়াও আমাদের দেশে যাদের ‘আদিবাসী’ বলা হয় ঐতিহাসিকভাবেও তারা এই ভূ-খণ্ডের আদিবাসী নয়। কিন্তু লেখক জাফর ইকবাল মনে করেন, সংবিধানে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি একটি অসম্মানজনক শব্দ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের এই মানুষদের বোঝানোর জন্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নামে একটা অসম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করা হয়।’

জাফর ইকবাল ‘২০০৯’ সালের (সম্ভবত তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ২০০৮ সাল। কারণ, ২০০৯ সালে কোনো নির্বাচন হয়নি।) নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। সাথে সাথে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ভূমিকার ভূয়সী প্রসংশা করে বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চ কিংবা তাঁর নেতৃত্বে থাকা তরুণদের বর্তমান অবস্থা যা-ই হোক না কেন, ২০১৩ সালের সেই আন্দোলনের স্মৃতি এই দেশের তরুণদের বুকের মাঝে সারা জীবন একটি আনন্দময় স্মৃতি হিসেবে বেঁচে থাকবে।’

বিএনপির ইশতেহারে শিক্ষাখাতে জিডিপির পাঁচ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা এবং পিইসি এবং জেএসসি বাতিল করার ঘোষণা থাকায় আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল্যায়নে জাফর ইকবালের মন্তব্য হলো, ‘আমার কোনও একজন ছাত্র এরকম একটি ইশতেহার লিখে আনতে পারলে তাকে নিশ্চিতভাবে এ প্লাস গ্রেড দিতাম!’

তবে নানা সময়ে ইসলাম, মুসলমানদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী এই লেখকের মূল্যায়নের এই ধারাটি চোখে পড়ার মতো।বাম রাজনৈতিক দল ও বাম ধারার প্রতি তার অপার মুগ্ধতা সময়ে অসময়ে বারবার প্রকাশ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার সংবিধান পরিপন্থি ও আইনত নিষিদ্ধ সেটি কীভাবে দুটি রাজনৈতিক দল তাদের ইশতেহারে ব্যবহার করল? কীভাবে ড. জাফর ইকবাল নির্বাচনী ইশতেহারে ওই শব্দটির ব্যবহার দেখে নিজের খুশি প্রকাশ করতে পারলেন?

পূর্ববর্তি সংবাদ৩ দিন ক্যাম্পের বাইরে বের হতে পারবে না রোহিঙ্গারা
পরবর্তি সংবাদনির্বাচন কমিশনকে পাঁচ বিষয়ে অবহিত করলো আওয়ামী লীগ