নির্বাচনে ইন্টারনেটের গতি কমালে যেসব ক্ষতি হবে 

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছুদিনের জন্য ইন্টারনেটের গতি কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় ইন্টারনেটের গতি ফোর জি থেকে টু জি’তে নামিয়ে আনার সুপারিশ পেশ করা হয়। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে কী ধরণের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে?ইন্টারনেটের গতি কমালে শুধু সাময়িক নয়, দীর্ঘমেয়াদেও বিভিন্ন রকম ক্ষতি হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি ইন্সস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এ.বিএম. মইনুল হোসেন মনে করেন, ইন্টারনেটের গতি কমালে শুধু সাময়িক নয়, দীর্ঘমেয়াদেও বিভিন্ন রকম ক্ষতি হতে পারে। ইন্টারনেটের গতি টু জি’তে নামানো হলে ই-মেইল আদান-প্রদান বা কিছু কিছু ওয়েবসাইটে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। টু জি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে কাগজে কলমে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও কার্যকারিতার কথা বিবেচনা করলে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার মতোই অবস্থার তৈরি হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইন্টারনেটে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদেশে বসবাসরত ব্যক্তিরা ইন্টারনেটে বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়বেন ।

ইন্টারনেট সেবা টু জি’তে নেমে আসলে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়বেন অনেক মানুষ। ব্যবসার কাজে ঝামেলা পোহাতে হবে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকও পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না বলে এফ-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান মইনুল হোসেন।

তার মতে, এর ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিদেশী আউটসোর্সিং সংস্থার সাথে ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে যারা কাজ করেন তারাও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করেন তিনি। ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দিলে অনেক জরুরি সেবা দেওয়া-নেয়াও বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যাতায়াতের ক্ষেত্রে টিকিট কাটা, সরকারি বিভিন্ন সেবা দেওয়া-নেওয়া বা ব্যাংকের লেনদেনের ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। ইন্টারনেট সেবার মান ব্যাহত হলে এই ধরনের কার্যক্রমও ব্যাহত হবে। যখন দেশের সব ধরনের সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালনা করার লক্ষ্য নিচ্ছি আমরা, সেসময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া সেই লক্ষ্য অর্জনের পরিপন্থী একটি সিদ্ধান্ত ।‘

নির্বাচনের সময় ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দিলে গণমাধ্যমগুলো সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পরবে বলে মনে করেন হোসেন। ইন্টারনেটের গতি কম থাকলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মূল কার্যালয়ে অডিও, ভিডিও বা ছবি পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখীন হবেন গণমাধ্যম কর্মীরা। সেক্ষেত্রে সংবাদ সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হবে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে খবর সংগ্রহ ও খবর প্রচার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো খবর ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম ফেসবুক। টেলিভিশন ক্যামেরা বা পেশাদার সাংবাদিকরা অনেকসময় বিভিন্ন ঘটনাস্থলে যেতে না পারলেও ফেসবুক লাইভ ফিচারের মাধ্যমে একজন মানুষ তার আশেপাশে কী ঘটছে তা তুলে আনতে পারেন সামাজিক মাধ্যমে।’

ইন্টারনেটের গতি কমে গেলে এই ফিচার ব্যবহার করা সম্ভব হবে না; যার ফলে খবর সংগ্রহ ও খবর প্রচারের কাজ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।

মাঝেমধ্যেই ইন্টারনেট বন্ধ করা বা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে বলে মনে তিনি।

‘সাম্প্রতিক সময়ে কোনো উন্নত দেশেই সঙ্কটের মুহূর্তে বা নির্বাচনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া বা গতি কমানোর নজির নেই; কিন্তু বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই এ ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়।’

সামান্য কারণে ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত করে দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগে ইচ্ছুকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

‘দেশী বা বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যখন দেখবে যে সামান্য কারণেই এখানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় বা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়, তখন তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।’

হোসেন বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে যদি এরকম একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয় যে বাংলাদেশে কিছুদিন পরপরই সামান্য কারণে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা এখানে ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবেন; যার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে।’

মইনুল হোসেনের মতে, ‘যতদিন পর্যন্ত আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করতে চাওয়ার প্রবণতা দূর করতে না পারবো, ততদিন আমাদের পক্ষে ডিজিটাল সেক্টরে পূর্ণ সক্ষমতা পাওয়া সম্ভব হবে না।’

সূত্র : বিবিসি বাংলা

পূর্ববর্তি সংবাদইজতেমার মাঠে হামলাকারী এক সাদপন্থীর রোমহর্ষক বর্ণনা, অতঃপর তওবা
পরবর্তি সংবাদবাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার হুমকির মুখে : হিউম্যান রাইটস