‘মাওলানা আবদুল মালেককে প্রশ্নবিদ্ধ করার দ্বারা তার কোনো ক্ষতি হবে না’

তাবলিগ-সংকট বিষয়ে চলমান বিতর্কে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন বিতর্কে থাকা মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক আলেম মাওলানা আবুদল মালেককে নিয়ে তার বিরূপ মন্তব্যের পর সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা। এসব চলমান বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আমরা হাজির হয়েছিলাম বিশিষ্ট লেখক ও সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদ-এর সামনে। ইসলাম টাইমস-এর পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আবু ইন্তেজার।  


 

ইসলাম টাইমস : বাংলাদেশে তাবলিগের বর্তমান সংকট ঘিরে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ-এর নাম বারবার উঠে আসছে। বিশেষত ১ ডিসেম্বরে টঙ্গী-আক্রান্তের পর তিনি ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হন। সম্প্রতি তার একটি ভিডিওবক্তব্যও প্রকাশ হয়েছে এ বিষয়ে। যেখানে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ এবং মাওলানা সাদ বিষয়ে কথা বলেছেন। সামগ্রিকভাবে তার নৈতিক অবস্থানের বিষয়টা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন আপনি?

শরীফ মুহাম্মদ :  মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এমন ব্যক্তি সমাজে যার একটা অবস্থান রয়েছে। তিনি আলোচিত, সমালোচিত, অনেকে তাকে বিতর্কিতও বলে থাকেন। তার ব্যক্তিত্বের বহুমুখী আলোচনায় আমি যেতে চাই না।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাবলিগ এবং এবং মাওলানা সাদ বিষয়ে তার ভিন্নমত সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আগে থেকেই। সম্প্রতি তিনি যে ভিডিওবক্তব্য দিয়েছেন সেটা নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং মানুষের বিতৃষ্ণা এবং ক্ষোভের কারণ হয়েছে।

সেই বক্তব্যে তিনি বলেছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ যদি মাওলানা সাদকে কাফের বলে তাহলে আমিও তাকে কাফের বলবো। কিন্তু তার এ বক্তব্যের সঙ্গে তার আগের কোনো বক্তব্যের মিল নেই। কেননা এর আগে তার পরিচালিত দু-একটি ইউটিব চ্যানেলে তাবলিগ বিষয়ে তার যেসব বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে এবং তার সম্পাদিক একটি অনলাইন পোর্টালে যেসব লেখা প্রকাশ হয়েছে, সেগুলোতে  বুঝা গেছে তিনি মাওলানা সাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তিনি সেসব বক্তব্যে এটাও বলেছেন, ‘মাওলানা সাদের ভুলগুলো এত মারাত্মক কোনো ভুল নয়। ভুল তো দারুল উলুমের সদরুল মুদাররিসিনেরও আছে। বড় বড় অনেক ইলমি (জ্ঞানগত) ভুল তারও আছে। কিন্তু সেগুলো আমরা কারো কাছে বলে বেড়াই না। মাওলানা সাদের ভুলগুলোও বলে বেড়ানোর মতো বিষয় নয়।’

উনি এমনও বলেছেন, ‘মাওলানা সাদ রুজু করেছেন। এখন তার রুজু করাটা কবুল হলো কিনা সেটা আল্লাহ দেখবেন, মানুষ এটা নিয়ে এত ব্যস্ত হচ্ছে কেন?’

শেষ প্রকাশিত বক্তব্যে উনি বলেছেন, ‘দারুল উলুম মাওলানা সাদকে কাফের বললে আমিও তাকে কাফের বলবো। দেওবন্দ যা বলেছে তার এক ইঞ্চি কমও বলবো না, বেশিও বলবো না।’

কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেওবন্দ যা যা বলেছে তিনি তো দেওবন্দের সব কথা বলেননি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা তার বক্তব্য পেশ করার একটা কৌশলী ভঙ্গি। উনি দেওবন্দের সঙ্গে নিজের বক্তব্যকে মিশিয়ে নিজের পক্ষে সাফাই পেশ করার চেষ্টা করছেন।

১ ডিসেম্বরের নারকীয় ঘটনার পর যখন দেশব্যাপী তার নামে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায় , তখন তিনি নিজের অবস্থানকে নিন্দামুক্ত করতে   মাওলানা সাদকে নিয়ে এমন উল্টো কথার আশ্রয় নিয়েছেন।

এখন এটাই যদি তার সঠিক বক্তব্য এবং তাবলিগ বিষয়ে তার অবস্থান হয় তাহলে তো সেটা ভালো। তিনি যেহেতু তাবলিগ সংকট বিষয়ে একজন মনোনীত উপদেষ্টা , সে হিসেবে  তার একটা পরিষ্কার অবস্থান  থাকাই তো ভালো  । দুই দিকে কথা  বলার নীতি তিনি যত দ্রুত পরিহার করবেন ততই সেটা মুসলিম উম্মাহর জন্য মঙ্গলজনক হবে।

ইসলাম টাইমস : মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ৯ ডিসেম্বরের ওই ভিডিওবক্তব্যে দাবি করেছেন, তিনি একবার যেটা বলেন সেটা থেকে তিনি কখনো রুজু করেন না বা তার যে কোনো তিনি খুব বুঝে শুনে প্রদান করেন, তাকে কখনো তওবা করতে হয় না। মাওলানা সাদের ব্যাপারেও তিনি একই মনোভাব পোষণ করে থাকেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

শরীফ মুহাম্মদ : উনার সারা জীবনের বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে উনার অনেক বক্তব্য যেগুলো অমি শুনেছি সেগুলোর বেশ কয়েকটার মধ্যে অদ্ভুত ধরনের বৈপরিত্য আমি লক্ষ্য করেছি। বিশেষ করে মাওলনা সাদের বিষয়টা দেখুন। গত কয়েক মাসের বক্তব্য এবং সাম্প্রতিক বক্তব্য যদি আপনি শোনেন তাহলে অনেক বৈপরিত্য আপনি নিজেই পাবেন। এক বক্তব্য দিয়ে তিনি তার আরেক বক্তব্য শুধরে নিয়েছেন বা ভুলের অপনোদন করেছন।

উনি একবার বলেছেন, মাওলানা সাদের ভুলগুলো আসলে তেমন মারাত্মক কোনো ভুল নয়। আবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সাক্ষাতকারে উনি বলেছেন, মাওলানা সাদের ভুলগুলো আমি পড়ে দেখিনি। আমি জানিও না আসলে সমস্যাগুলো কী কী!

উনি বলেছেন, আমার তওবা করার প্রয়োজন হয় না বা রুজু করার দরকার হয় না। এটা ভালো। কারো ভুল না হলে সেটা সাধুবাদের বিষয়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন চিন্তাশীল মানুষ কে আছে যে নিজের সব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলতে পারে যে আমার কখনো কোনো ভুল হয় না, আমার তওবা করার প্রয়োজন পড়ে না? এটা তারাই বলতে পারে যারা  নিজেদেরকে সাধারণ মানুষের স্তর থেকে অনেক উঁচুতে আছেন বলে  মনে করেন। এটা সাহসের ব্যাপার। এ সাহস হয়তো তাঁর আছে।

আরও পড়ুন: মুফতি তাকি উসমানির অডিওবার্তা: ফরীদ মাসঊদের দাবি অসত্য প্রমাণিত (অডিও)

ইসলাম টাইমস : মাওলানা মাসঊদ তার ওই বক্তব্যে বলেছেন, ‘জমহুর’ (সংখ্যাগরিষ্ঠ) সবসময় হকের বিপক্ষে থেকেছে। অর্থাৎ আমাদের নবীগণ যখন দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তখন সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক তাদের অস্বীকার করেছে। কিন্তু নবীগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ বা জমহুরের কথা না শুনে গুটিকয়েক মানুষ নিয়ে দ্বীনের কাজ করে গেছেন। মাওলানা সাদকে নিয়েও তিনি একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার এ কথা ধর্মীয় মানদণ্ডে কতটুকু গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন?

শরীফ মুহাম্মদ : ‘জমহুর’-এর এই অদ্ভুত ব্যাখ্যা আমার কাছে একদমই নতুন  মনে হয়েছে। ইলমের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো মানুষ একটি পরিভাষা নিয়ে এমন অদ্ভুত ব্যাখ্যা করতে পারেন, সেটা আমার ধারণাই ছিল না।

যারা মাদরাসার প্রাথমিক ক্লাসগুলোতে ফিকাহ’র কিতাব পড়েন তারাও জানেন যে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় যেসব আলেম প্রণিধানযোগ্য, কেবল তাদের ঐকমত্যকেই জমহুর বলা হয়। মাসআলা বা ফতোয়ার ক্ষেত্রে এই জমহুরের রায় বিবেচ্য ধরা হয়।  অথচ তিনি জমহুর বলে শুধু সাধারণ জনগণ নয়, তাদের কাফেরদের সঙ্গেও তুলনা করলেন। এবং তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘আমার মতামতটাই সঠিক এবং এই জমহুর জনগণ যদি আমার বিরুদ্ধাচরণ করে তবে কি সেটা আমাকে মানতে হবে?’

এ ধরনের নতুন কথা  কীভাবে একজন আলেমের মুখে শোভা পেতে পারে, আমি জানি না।

ইসলাম টাইমস : মাওলানা মাসঊদ তার বক্তব্যের এক জায়গায় বলেছেন, বাংলাদেশে যারা দেওবন্দের কথা বলে তারা কখনো দেওবন্দ যায়নি, দেওবন্দে লেখাপড়াও করেনি। আর পাকিস্তান থেকে যারা পড়াশোনা করে এসেছে তারা সমাজে ফেতনা ছড়ায়। প্রশ্ন হলো, দেওবন্দ না গেলে কি দেওবন্দকে নিজের চেতনা হিসেবে মূল্যায়ন করা যাবে না? কিংবা যারা দেওবন্দ গিয়ে পড়াশোনা করে এসেছেন তারাই কেবল দেওবন্দ নিয়ে কথা বলার হকদার?

শরীফ মুহাম্মদ : প্রথম কথা হলো, পাকিস্তানের মাদরাসাগুলো থেকে পড়াশোনা করে আসলেই কেউ ফেতনাবাজ হয়ে যায় – এমন উদ্ভট কথা একজন সুস্থ রুচিবান ব্যক্তি কীভাব বলতে পারেন আমার বুঝে আসে না।

দ্বিতীয় কথা হলো, এই যে দেওবন্দপন্থী, পাকিস্তানপন্থী বলে উনি আলেমদের মধ্যে বিভাজন ‍সৃষ্টি করছেন, উনি এই বিভাজন করছেন কাদের খুশি করতে? তাছাড়া তিনি এবং তার অনুসারীরা পাকিস্তানপন্থী, পাকিস্তানের আদর্শ লালনকারী – এমন বিদ্বেষমূলক অভিধা মাঝে মাঝেই প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে যারা সেক্যুলার বা প্রচণ্ড ভারতপন্থী, তিনি তাদের খুশি করার জন্যই কি এমন কথা বলে থাকেন কি-না, সেটা আমার জানা নেই।

দেওবন্দের চেতনা বা দেওবন্দ আন্দোলন নিয়ে আমরা যা বুঝি, তার সঙ্গে মাওলানার এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেননা দারুল উলুম দেওবন্দ কি কেবল উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের চারদেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ? নাকি এ চেতনা বিশ্বব্যাপী  কোটি মুসলমান সবার জন্যই? যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে দেওবন্দকে একটি দেয়ালের সীমানায় কুক্ষিগত করার সুযোগ কি আছে ?

তিনি এক সময় দেওবন্দের নামকরা ছাত্র ছিলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তান কিংবা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের কোনো আলেম যদি দেওবন্দি ধারার কোনো মাদরাসায় পড়ে যোগ্য আলেম হয়ে থাকেন তাহলে কি দেওবন্দের চেতনাকে ধারণ করতে পারবেন না?

দেওবন্দ নিয়ে তার যে ক্ষুদ্র সংজ্ঞা ও চিন্তা, এটা নিতান্তই তার ব্যক্তিগত ভাবনারই পরিচায়ক। এর সঙ্গে  দেওবন্দের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। এসব কথায় দেওবন্দের উচ্চতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয় কি না ভেবে দেখা দরকার।

ইসলাম টাইমস : মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ তার বক্তব্যে বারবার বলেছেন, তকি উসমানি সাহেবের সঙ্গে যখন তার সাক্ষাত হয় তখন তকি উসমানি সাহেব দেওবন্দের ফতোয়াকে কোনো ফতোয়াই বলেননি। তিনি বলেছেন, এটা নাকি কোনো ফতোয়াই হয়নি। মাওলানা মাসঊদের এ বক্তব্যকে আপনি কতটুকু সঠিক বলে ধারণা করেন?

শরীফ মুহাম্মদ : মাওলানা তকি উসমানি তো পাকিস্তানি আলেম। তার বাবা আল্লামা মুহাম্মদ শফী রহ. পাকিস্তানপন্থী আলেম ছিলেন। তাহলে তিনি কেন একজন পাকিস্তানি আলেমকে উদ্ধৃত করবেন তার বক্তব্যে? যেখানে তিনি পাকিস্তানে পড়াশোনা করলেই যেকোনো আলেম ফেতনাবাজ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস করেন, সেখানে একজন পাকিস্তানি আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে দেওবন্দের ফতোয়াকে ‘কিছুই নয়’ বলে অবমূল্যায়ন করছেন – এটা কতোটা শোভন তাঅঁরি জন্য ? মাওলানা তকি উসমানি এ বিশ্বের অন্যতম ইসলামি স্কলার এবং প্রাজ্ঞ একজন আলেম। কিন্তু তিনি পাকিস্তানি। মাওলানা মাসঊদ নিজের বক্তব্যের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য সেই পাকিস্তানি আলেমের শরণাপন্ন হতেও দ্বিধা করেননি। অথচ তিনি কথায় কথায় পাকিস্তানি আলেমদের দোষারোপ করে থাকেন।

এটা হলো প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হলো, মাওলানা তকি উসমানি এই কথা বলেছেন কিনা সে ব্যাপারে আমাদের জানা নেই। তকি উসমানির সঙ্গে বাংলাদেশে যাদের যোগাযোগ আছে তারাই এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সঠিক তথ্য হয়তো জানতে পারবেন।

তৃতীয় কথা হলো, মাওলানা তকি উসমানি এমন ব্যক্তি নন যে দেওবন্দের ফতোয়াকে ‘কোনো ফতোয়াই নয়’- এমন বলে উড়িয়ে দিবেন। তার যে ব্যক্তিত্ব , মনোভাব ও প্রকাশভঙ্গি, সে হিসেবে এমন কথা  তার সঙ্গে মানানসই মনে হয় না। হতে পারে তিনি কথাগুলো অন্যভাবে বলেছেন , কিন্তু  নিজস্ব  মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার কথাকে আরেকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবতা এখনই যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

ইসলাম টাইমস : ওই বক্তব্যে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দাবি করেছেন, রাবেতায়ে আলম আল-ইসলামিয়া থেকে তাকে বাংলাদেশের ‘মুফতিয়ে আম’ বা প্রধান মুফতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর সত্যতা কতটুকু?

শরীফ মুহাম্মদ : আসল কথা হলো, রাবেতায়ে আলম আল-ইসলামিয়া থেকে এ ধরনের কোনো খেতাব বা পদবী কাউকে দেয়া হয় না। এটা তাদের দেয়ার বিষয়ও নয়। মূলত রাবেতার পত্রিকায় যখন কোনো সম্মেলনের সংবাদ প্রচার করা হয় তখন প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি সম্মেলনে নিজের যে পরিচয় প্রদান করেন সেখানে সেই পদবীই ছাপা হয়। এর আগেও বাংলাদেশের বহু ব্যক্তি রাবেতায় গিয়ে নিজেদের মতো  করে  পদবী লিখে দিয়ে এসেছেন। পরে সেভাবেই প্রচার হয়েছে।

রাবেতার সম্মেলন নিয়ে বাংলাদেশে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলেই এমন তথ্য  জানতে পারি। সুতরাং এটাকে প্রধান মুফতির সনদ মনে করার কিছু নেই।

মজার বিষয় হলো, এর আগে রাবেতায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করতো জামায়াতে ইসলামীর মীর কাসেম আলী বা জামায়াতী ধারার বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।  এ কারণে রাবেতাকে দুই চোখে দেখতে পারতেন না। আজকে তিনিই রাবেতার সম্মেলনে যাচ্ছেন এবং সেখানে কী কী করে এলেন সেগুলো বলছেনও। আমার জানা নেই রাবেতা বিষয়ে তাঁর এই উল্টো যাত্রার পেছনে কী আছে!

ইসলাম টাইমস : মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ তার বক্তব্যে বলেছেন, মাওলানা আবদুল মালেক হলেন মাওলানা তকি উসমানির ছাত্র। যেখানে মাওলানা তকি উসমানি দেওবন্দের ফতোয়াকে ‘কোনো ফতোয়া নয়’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেখানে তার ছাত্র হয়ে মাওলানা আবদুল মালেক কীভাবে মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন? ওই বক্তব্যে তিনি মাওলানা আবদুল মালেককে বেয়াদব বলেন এবং অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন। মাওলানা ফরীদ উদ্দীনের অবস্থান থেকে এমন বক্তব্যকে কতটা গ্রহণযোগ্য মনে করেন?

শরীফ মুহাম্মদ : এটা আল্লাহ তাআলারই ফায়সালা যে মাওলানা আবদুল মালেক মাওলানা মাসঊদের চেয়ে বয়সে পনেরো-বিশ বছরের ছোট হবেন হয়তো,  কিন্তু আল্লাহ তাকে যে মেধা, যোগ্যতা এবং কবুলিয়্যাত দান করেছেন এটা হয়তো বয়সে বড় একজন ব্যক্তির ঈর্ষার কারণ হয়ে থাকে। উনি হয়তো সহ্য করতে পারেন না। তার চেয়ে কমবয়সী, আবার পড়াশোনা করেছেন পাকিস্তান থেকে। কিন্তু তিনি যখন ধর্মীয় বা সামাজিক বিষয়ে কোনো ফতোয়া বা সিদ্ধান্ত দেন, জাতি তখন সেটা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেয়। অথচ তিনি কথা বললেই জাতি সেটা ঘৃণাভরে ছুড়ে ফেলে।

আমরা আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করি যে বাংলাদেশে মাওলানা আবদুল মালেক,  মুফতি মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন এবং এই মানের আরও কিছু আলেম আল্লাহ দান করেছেন। এ দেশের মুসলিমদের জন্য এবং ইলমি অঙ্গনের জন্য এটা অনেক বড় মর্যাদার বিষয়। এটাই হয়তো কারো কারো ঈর্ষার বড় কারণ।

মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের শিক্ষক যারা তারা সকলেই তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ইলমি যোগ্যতার প্রতি নিরঙ্কুশ সুধারণা রাখেন। আল্লামা আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, আল্লামা তকি উসমানি, আল্লামা আবদুর রশিদ নোমানির অত্যন্ত স্নেহধন্য এবং বিশিষ্ট ছাত্র ছিলেন তিনি। এখনও তার অনেক শিক্ষক তাকে ভালোবেসে চিঠি লিখেন এবং রাহনুমায়ি করেন।

সুতরাং এমন একজন মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করার দ্বারা তার তো কোনো ক্ষতি হবেই না বরং প্রশ্ন উত্থাপনকারী ও আক্রমণকারী নিজেই ক্ষুদ্র ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যান।

একটা বিষয় আমার  খুবই অবাক লেগেছে,  ঘরোয়া পরিবেশে মানুষ অনেক সময় আবেগে প্রগলভ হয়ে অনেক কিছু বলে ফেলে। কিন্তু সচেতনভাবে সেই নেতিবাচক আবেগের ভিডিও ও লিখিত কপি নিজের উদ্যোগে প্রচার করতে হবে কেন?  ভেতরে ভেতরে কতোটা সংকুচিত হলে মানুষ এমনটা করতে পারে!

ইসলাম টাইমস : এর আগেও বহুবার মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বাংলাদেশের বিভিন্ন আলেম সম্পর্কে বিরূপ ও সমালোচিত বক্তব্য দিয়েছেন। সে ব্যাপারে কী বলবেন?

শরীফ মুহাম্মদ : গত ১ ডিসেম্বরের আগের দিন শুক্রবার তিনি ইকরা মসজিদে তিনি একটি বক্তব্য রাখেন। সেই বক্তব্যে তিনি আলেমদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের সব মৌলভিই জাহেল। হ্যাঁ, দু-একজন থাকতে পারে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন।

বাংলাদেশের আলেমদের নিয়ে তার বিতৃষ্ণাটা কি নতুন?  তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে বাংলাদেশের আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি মিল হয় না। অথচ তার সঙ্গে সেক্যুলারদের খুব মিল হয়। যারা নাস্তিক্যবাদ লালন করে, মুক্তবুদ্ধির চিন্তা যারা করে, ইসলামের বিপক্ষে যারা কথা বলে তাদের সঙ্গে তার স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রায়ই চোখে পড়ে  । তারা যেভাবে আলেমদেরকে কটাক্ষ করে, যেমন, সাম্প্রদায়িক, হেফাজতি, পাকিস্তানপন্থী; তিনিও একই ভাবে আলেমসমাজকে অভিহিত করেন। এটা কি অনিচ্ছাকৃত কোনো মিল কি না আমি জানি না।

তিনি আলেমদের কোনো বৈঠকে যেতে যতটা পছন্দ করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসেন নাস্তিক বা মুক্তবুদ্ধির মানুষের সঙ্গে বৈঠক করতে। গণমাধ্যমেই তো এসব দেখা যায়।  তাছাড়া শাহবাগে গিয়ে উনি নিজের জীবনে সবচে বড় পুণ্য অর্জন করেছেন – এমন বক্তব্য তো সবাই জানেন।

সুতরাং তিনি বাংলাদেশের আলেমসমাজ নিয়ে আর কতটুকুই বা ভালো মন্তব্য করবেন।

 

পূর্ববর্তি সংবাদগাজীপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি
পরবর্তি সংবাদ৩০ ডিসেম্বর মোবাইল নেটওয়ার্ক ‘টু জি’ করার পরামর্শ