যাকাত গ্রহণকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে নিজের ঈমানের ক্ষতি করছেন না তো?

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ ।।

সম্প্রতি একটি শ্রেণিকে দেখা যাচ্ছে মাদরাসার উলামা-তলাবাকে যাকাত-ফিৎরা গ্রহণকারী বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে। বক্তৃতা, টকশো কিংবা সাধারণ আলাপচারিতায় যেন বিষয়টি বিদ্রূপের এক মোক্ষম অবলম্বন হয়ে উঠেছে। অথচ দাড়ি টুপিওয়ালা যে মানুষগুলো বিষয়টিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের উপাদেয় অনুষঙ্গ মনে করছেন তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না যে, এর দ্বারা তারা নিজেদের কতবড় ক্ষতি করছেন।

তারা কি ভুলে গেছেন, যাকাত-ফিৎরা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়? যাকাত প্রদান ও যাকাত গ্রহণ দুটোই শরীয়তের বিধানের আওতাভুক্ত। যারা যাকাত প্রদান করেন তারা যেমন শরীয়তের হুকুম পালনার্থে কাজটি করেন তেমনি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি যখন তা গ্রহণ করেন তিনিও শরীয়তের বিধান অনুসারেই গ্রহণ করেন। তাহলে শরীয়তে অনুমোদিত একটি হালাল বিষয়কে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কারণ বানানো কি পরোক্ষভাবে শরীয়তের ঐ অনুমোদনকেই বিদ্রুপ করা নয়? এটা যে ইমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তা কি উপলব্ধি করা প্রয়োজন নয়?

বর্তমান সময়ে যে কোনো রাষ্ট্র জনগণের ট্যাক্সের উপর চলে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার নির্বাহ হয় জনগণ-প্রদত্ত ট্যাক্সের পয়সায় । একারণে কি ঐ সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকরা অবজ্ঞার পাত্র হয়ে যাবেন? রাষ্ট্রের পক্ষ হতে নির্ধারিত ট্যাক্সের পয়সায় যদি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কিছু না থাকে তাহলে সম্পদ ও সম্পদশালীদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত যাকাত, শরীয়তের নিয়ম অনুসারে যারা গ্রহণ করবেন তারা কেন অবজ্ঞার পাত্র হবেন?

আজ একশ্রেণির দাড়ি-টুপিওয়ালা যে কাজ করছেন এ তো ঐ সকল ইসলাম বিদ্বেষীদের কাজ যাদের অন্তরে ইসলামের যাকাত-ব্যবস্থা সহ অন্যান্য ব্যবস্থার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা ও মান্যতা নেই, শরীয়তের হালাল-হারামের ব্যাপারে যাদের কোনো আবেগ-অনুভ‚তি নেই, হালালকে ভালো মনে করার আর হারামকে মন্দ মনে করার চেতনা নেই, যাদের কাছে ভালো-মন্দের মাপকাঠি হালাল-হারাম নয়, অন্য কিছু এমন লোকেরা ইসলামের কোনো হালাল বিষয়কেও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের অনুষঙ্গ বানাতে পারে, কিন্তু কোনো ঈমানদার কি তা পারে? সচেতনভাবে তো পারার প্রশ্নই আসে না, অন্যের দেখাদেখি না বুঝে কখনো এ জাতীয় কোনো কাজ হয়ে গেলে কি বুঝে আসার সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে ফিরে আসা উচিত নয়?

যাকাত-গ্রহণের উপযুক্ত শ্রেণিগুলোর বিবরণ সরাসরি কুরআন মাজীদে আছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও সুন্নাহয় আছে। তিনি নিজে যেমন এসংক্রান্ত বিধি-বিধান শিক্ষা দান করেছেন তেমনি সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ছিলেন তাদের মাঝে তা বিতরণও করেছেন।

আরও পড়ুন : নবী-জীবনের আদর্শ: জান্নাতের পথের সূচনা হচ্ছে সত্যবাদিতা : মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ

যারা আজ যাকাত গ্রহণের কারণে মাদরাসা ও উলামা-তলাবাকে বিদ্রূপ করছেন তারা কি বুঝতে পারছেন এই বিদ্রূপ কোথায় পৌঁছছে? এই বিদ্রূপ কি পরোক্ষভাবে যাকাত গ্রহণের কোরআনী বিধান পর্যন্ত পৌঁছছে না? সেই বিধান যিনি বিস্তারিতভাবে উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং স্বয়ং যাকাতের সম্পদ উপযুক্ত লোকদের মাঝে বিতরণ করেছেন সেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছছে না? এই বিদ্রূপ কি আল্লাহর রাসূলের দরিদ্র সাহাবায়ে কেরাম যারা কোরআন-সুন্নাহর অনুমোদনের ভিত্তিতে তা গ্রহণ করেছেন তাদের পর্যন্ত পৌঁছছে না?

আমরা বিশ্বাস করতে চাই, ধর্মীয় বেশভুষার অধিকারী যারা এই ঝুঁকিপূর্ণ কথা-বার্তায় লিপ্ত হয়ে পড়েছেন তারা অজ্ঞতার কারণে এবং না বোঝার কারণে বিবাদজনিত ক্রোধের বশবর্তী হয়ে এতে লিপ্ত হয়েছেন। এই গোনাহের জন্য তাদের খাঁটি মনে তওবা করা দরকার।

আল্লাহ তাআলা তাদেরকে হেদায়েত দান করুন। না বুঝে এই ফিতনার শিকার যারা হয়েছেন তাদের তওবা করে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন। আমীন।

পূর্ববর্তি সংবাদআগামীকাল পিতার কবর জিয়ারত শেষে প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদমানবাধিকারের ধ্বজাধারীরা প্যারিসে বোবা-বধির ও অন্ধ : এরদোগান