ইখলাস ও ঐক্য ছাড়া দ্বীনি কাজে কামিয়াবি আসে না : শায়েখ মুফতি জামালুদ্দীন

ইসলাম টাইমস প্রতিবেদক : ইলম, দাওয়াত ও ইসলাহের মেহনত নিয়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে ছুটে চলা সত্তর বছর বয়সী প্রবীণ আলেমেদ্বীন শায়েখ মুফতি জামালুদ্দীন। প্রায় দুই যুগ ধরে নিউইয়র্কে প্রবাস জীবন যাপন করছেন। মসজিদের খতিব, মাদরাসার মুদির। দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি পালন করছেন নিউইযর্ক শরিয়া বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। সম্প্রতি দাওয়াতি, দ্বীনি ও পারিবারিক সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরে আসেন। ব্যস্ত এ সফরের মধ্যেই তিনি সময় বের করেন ইসলাম টাইমসের জন্য। গত ১৫ নভেম্বর রাতে ইসলাম টাইমস কার্যালয়ে তাশরিফ আনেন। ঘণ্টা খানেকের অবস্থান ও আলোচনায় দ্বীনি দাওয়াত ও কাজের বিষয়ে হৃদয়জাত মতবিনিময়ে অংশ নেন তিনি। তুলে ধরেন বিভিন্ন রাহনুমায়ি ও পরামর্শ।

তিনি বলেন, কোনো দ্বীনি কাজের জন্য ভেতরের দিক থেকে প্রয়োজন ইখলাস আর বাইরের দিক থেকে প্রয়োজন ঐক্য। ভেতর ও বাইরের এ দুটি গুণের সমন্বয় হলে সেই কাজের কামিয়াবি দান করেন আল্লাহ তায়ালা। উলামায়ে উম্মত যুগে যুগে দ্বীনি কাজের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজন ও গুণাগুণের নির্যাস হিসেবে এ দুটি বিষয়কে একসঙ্গে করার কথা উল্লেখ করেছেন। দুটি বিষয় হলো, ইখলাস ও ঐক্য।

দ্বীনের কাণ্ডারি উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনের সহি দাওয়াতি মেহনতে যুক্ত সব দাঈদের মাঝে ঐক্য প্রচেষ্টার জন্য দরদি ও বিনয়ী একটি ঐক্যপ্রয়াসী দরদি কাফেলার মেহনতের গুরুত্বের ওপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, হাতে-পায়ে ধরে, আঘাত ও তিরস্কার সয়েও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ একটি অবস্থার ওপর আনার জন্য কিছু মানুষের লেগে যেতে হবে। তাদের নিজেদের কোনো লক্ষ্য বা প্লাটফরম থাকবে না। তারা শুধু জুড়ে দেওয়ার পেছনে মেহনত করবেন।

মুফতি জামালুদ্দীন লেখালেখির মাধ্যমে জাতির জন্য দিকনির্দেশকের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে বলেন, কাছাকাছি সময়ে মনীষী সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. যে দরদ ও আঙ্গিক বেছে নিয়ে কাজ করেছেন- এ যুগে এ ময়দানের মেহনতকারীদের জন্য তাঁর জীবন ও কাজ অনুসরণীয় হতে পারে। উম্মাহর চিন্তা ও বোধকে জাগ্রত করার জন্য হজরত সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর রচনাবলি ও কর্মপন্থা এ যুগের বুদ্ধিবৃত্তিক দাঈদের জন্য বিশেষভাবে অনুসরণীয়।

মিডিয়ায় দ্বীনের খেদমত করার সম্ভাবনা ও করণীয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে খবর তুলে আনা ও প্রচার করার পাশাপাশি সেই খবরের যে চাহিদা তা বাস্তবায়নে মেহনত করার প্রয়োজনীয়তাটাও তৈরি করা ও পুরা করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে দ্বীনের কাজ শুরু করতে হবে। করতে থাকতে হবে। পরে ওই কাজে ফলোয়ার বা অনুসারীরা অংশ নেবে। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জীবনে এই তাওয়াক্কুল আলাল্লাহর উদাহরণ বিদ্যমান।

নিকট অতীতে উপমহাদেশে দ্বীনি তাহরিক ও মেহনতের ধারাবাহিকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ. তাহরিক পরবর্তী সময়ে হজরত কাসেম নানুতুবী রহ., শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি রহ., হজরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহ., হজরত হাকিমুল উম্মত  আশরাফ আলী থানভি রহ. পরিবেশ ও পরিস্থিতি সামনে নিয়ে দ্বীনের মেহনতের বিভিন্ন সুরতে কাজ করেছেন। এ সময়টাতেই হেকমত ও দাওয়াতি কাজের একটি নমুনা পেশ করে কাজ শুরু করেন দেওবন্দ মাদরাসারই ছাত্র হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.। এটি একই সঙ্গে তাহরিকে ঈমান ও তাবলিগের মেহনত। এ মেহনতের বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ নির্ভরতা ও মুজাহাদা। আল্লাহ ভরসা নীতি (তাওয়াক্কুল) ও মুজাহাদা (কষ্ট সহিষ্ণুতা) না থাকলে এ মেহনতের সুফল বাকি থাকবে না।

শায়েখ জামালুদ্দীন আধ্যাত্মিক, দাওয়াতি ও ইলমি কাজের ইতিবাচক ধারার আঙ্গিক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, মুরুব্বিরা বলেন, দ্বীনি দাওয়াতি কাজ চারটি বিষয় থেকে মুক্ত থাকা দরকার। এক. তানকিস (কাউকে ছোট করা) দুই. তানকিদ (কারও সমালোচনা করা) তিন. তারদিদ (কারও কথা খণ্ডন করা) চার. মুকাবালা (কারও সঙ্গে মুখোমুখি বিবাদে যাওয়া)। সাধারণ অবস্থায় ইতিবাচক দাওয়াতি কাজের জন্য এ চারটি বিষয় অনুসরণের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

শায়েখ মুফতি জামালুদ্দীন ইসলাম টাইমস সম্পাদকের দফতরে কথা বলছিলেন। বিভিন্ন প্রসঙ্গ ও কথার সূত্র তুলে ধরছিলেন ইসলাম টাইমস সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদ। মজলিসে উপস্থিত ছিলেন মুফতি রফীউদ্দিন, মাওলানা আফতাব আহমাদ, মুফতি শহীদুল ইসলাম, প্রকৌশলী খালিদ হাসান প্রমুখ।

পূর্ববর্তি সংবাদনির্বাচনে দুর্নীতিবাজদের বয়কট করুন : চরমোনাই পীর
পরবর্তি সংবাদচীনা ও ভারতীয় বিরোধী সমাবেশে অনন্য নজির স্থাপন করলো মালয়েশীয় মুসলিমরা