ভারসাম্যের রাজনীতির পরিণতি ৩ আসন: খানিক পেছন-ফেরা

আবু তাশরীফ ।।  

ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা ভারসাম্যের রাজনীতি করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩টি আসনে মনোনয়ন পেল মহাজোট থেকে। ভারসাম্যের রাজনীতি নিয়ে তুমুল বাগাড়ম্বরের পর ৩০০ আসনের সংসদে ১ পার্সেন্ট মনোনয়ন পেয়ে রাজনীতিতে তিনি আর কতোটা প্রাসঙ্গিক থাকছেন– এ প্রশ্ন নতুন করে দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে শরিক দলগুলোর মনোনয়নের যে চিত্র ৭ ডিসেম্বর প্রকাশ হয়েছে, তাতেই ৩ আসনের এ তথ্যটি সামনে এসেছে। আসন ভাগাভাগির নকশায় আরো দেখা গেছে, বি চৌধুরীর দল আর জাসদ (ইনু)-এর আসন সংখ্যা সমান। উভয়েই ৩টি করে আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। অবশ্য মহাজোটের অপর শরিক রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির আসন সংখ্যা বি চৌধুরীর দলের চেয়ে ২টি বেশি।

বিএনপির মতো দলের সাবেক মহাসচিব, সাবেক রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী ও প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে অধ্যাপক বি চৌধুরীর দলের নির্বাচনী জোটের এই পরিণতি-অংক রাজনীতির ময়দানে বেশ কৌতুকের সৃষ্টি করেছে।

বিশেষত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগে থেকে যেভাবে সরকোরের দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ডা. বি চৌধুরী কথা বলছিলেন – তাতে মনে হয়েছিল, কোনোভাবেই এ সরকারের সঙ্গে তার সখ্য হওয়া আর সম্ভব নয়। এরপর যখন তিনি মান্না, আসম আ. রব, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মনসুরদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যের আয়োজনের সময় জোর গলায় ভারসাম্যের রাজনীতির কথা বলছিলেন, তখন মনে হয়েছিল অন্তত ৫০ আসনের একটি টার্গেটের আগে কোনো জোটের সঙ্গেই তিনি বসছেন না। বিএনপির সঙ্গেই যেহেতু বসতে চাচ্ছেন না, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তো বসার প্রশ্নই আসে না!

এরও পর ড.কামাল হোসেনের সঙ্গে তার বৈঠক শুরু হলে এ ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। একপর্যায়ে তার পুত্র এবং তার দলের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনের সংসদে ১৫০ আসনের ভারসাম্যের সংখ্যা নিয়ে উঁচু কণ্ঠে বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষি শুরু হয়।সেই দর কষাকষির সময় অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর হাতে হয়তো কোনো ম্যাজিক আছে। আসন আর প্রার্থীর হিসাব ধরে কথা বললে তো এত বড় সংখ্যার দাবি তাঁর পক্ষ থেকে উঠার কথা নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড. কামালের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া থেকে বিরত হওয়ার প্রথম দিনটিতেই ভারসাম্যের সেই ম্যাজিকের বেলুন পয়লা বারের মতো চুপসে যায়। তাঁর দলে ভাঙন ও কিছু খুচরা দলের যোগদানে তাঁর রাজনৈতিক কারিশমা নিয়ে সন্দেহ আরও দানা বেঁধে ওঠে।

এরপর যখন পুরো উল্টোদিকে ঘুরে মহাজোটের সঙ্গে সুর মিলিয়ে, কথা মিলিয়ে তিনি পথ চলতে শুরু করেন – তখন আর বুঝতে বাকি থাকল না যে – তাঁর ও তাঁর পুত্রের মুখে বলা সব সংখ্যা ও বাগাড়ম্বর আসলেই ফাঁপা। তখনও পর্যন্ত ধারণা করা যায়নি যে–সেই ভারসাম্যের পরিণতি গিয়ে ঠেকবে মাত্র ৩টি আসনের মনোনয়নে।

ডা.বি চৌধুরীকে কয়েক মাসে কেউ কেউ মাহাথিরের জায়গায় ভাবতে শুরু করেছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, সরকারবিরোধী সম্মিলিত ফ্রন্টের তিনিই হয়তো হয়ে উঠবেন ভরসা-মুরব্বি। আগামী সরকারের বড় কোনো চেয়ারের আরোহী। সেই তিনিই এখন রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ে প্রায় অর্ধেক আসনের বাটোয়ারায় আটকে রইলেন। পুত্র মাহী বি চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, আসন আরও বাড়তে পারে।’ আসন হয়তো বাড়বে, অথবা সগৌরবে আটকে থাকবে ৩ টাতেই । এই ৩ টার মধ্যে জিতে আসবে কয়টি আসন—সেটাও কি নিশ্চিত করে বলা যায়? বিএনপির সঙ্গে দর কষাকষিতে তাঁর গলা-উঁচু ‘ভারসাম্যের রাজনীতির’ এখন কী হবে তবে? রাজনীতির ত্রাণকর্তার ভূমিকায় নামতে চেয়ে প্রার্থীর মতো মূল বারান্দার বাইরেই কি তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? তাঁর সেই দাঁড়িয়ে থাকার ভারসাম্যটা শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকবে তো?

পূর্ববর্তি সংবাদ২০৬ আসনে বিএনপির যারা ধানের শীষ পেলেন 
পরবর্তি সংবাদআওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে ২০ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য