শির দেগা—নেহি দেগা আমামা

ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী ।।

প্রেক্ষাপট ১লা ডিসেম্বর। দুই হাজার আঠারো। যেদিন টঙ্গী ইজতেমার ময়দানের সংবাদে বারবার শিউরে উঠছিলাম। দরসে বসতে গিয়েও বসতে পারছিলাম না। পড়াতে গিয়েও স্থির থাকতে পারছিলাম না—হয়ে উঠছিলাম ছলোছলো। অশ্রুকাতর।

পাশের মসজিদে একটা দল ছিলো। ভোরেই ওরা ধেয়ে গেছে ময়দানে! পিকআপে করে নিয়ে গেছে যা নেওয়ার। ঢাকা শহরের আরও অনে ক মসজিদে এমন অনে ক মানুষ জড়ো হয়েছিলো রাতের অন্ধকারকে আশ্রয় করে। আযানের আগে-পরে (ফজরের আগে আগে) ওরা মিশনে বেরিয়ে পড়েছিলো।

কিন্তু মনে এদের—এতো হিংস্রতা লুকিয়ে ছিলো—রাতের অন্ধকার কি জানতো؟!! ভোরের স্নিগ্ধ শীত-সূর্যটাও কি একটু টের পেয়েছিলো?

সকাল এগারোটার তেতিয়ে ওঠা সূর্যও জানতো না— প্রশাসনের এইসব আশ্বাস—কী আড়াল করে রেখেছিলো! না, কেউ জানতো না, ইজতিমার এই ‘পুণ্যভূমি’ একটু পরেই হয়ে উঠবে—এক বধ্যভূমি! একটু পরেই এই তুরাগের তীরে নেমে আসবে ওই ফুরাতের নৃশংসতা!! কেউ জানতো না! জানতো শুধু এরা এব! এদের দোসররা!

এ কয়দিন ছোট্ট একটা লেখা লিখে আমি পাথর হয়ে বসে ছিলাম! দেখছিলাম আর শুনছিলাম ঘটে যাওয়া বর্বরতার কথা! নৃশংসতার কথা! সহ্য করতে পারছিলাম না! আবার বসলাম! বলে উঠলাম—

শির দেগা—নেহি দেগা আমামা!

শির তো নিয়েছোই! আমামা নিতে পারো নি! করেছো শুধু রক্তাক্ত! শোনো— কওমি মাদরাসাই তাবলিগ। তাবলিগই কওমি মাদরাসা! কওমি মাদরাসা থেকে তাবলিগ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। তাবলিগ থেকে কওমি মাদরাসা আলাদা করতে পারবে না।কোনো ছল-চাতুরি কাজে আসবে না। কোনো অশোভন প্রলোভনেও শেষ রক্ষা হবে না। তোমরাই বিচ্ছিন্ন হয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে নিক্ষিপ্ত হবে। সে সময় কি খুব দূরে?

কে বলেছে— এই হিংস্রতায় হযরতজী ইলিয়াস রহ.-এর তাবলিগ আছে?

খুঁজে খুঁজে ছাত্র মেরেছো! ছাত্রের উস্তায ও শিক্ষক পিটিয়েছো! ছোট ছোট শিশুকে ধরে ধরে আছাড় দিয়েছো! ভয় দেখিয়েছো! ওদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছো। হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছো! লাশ পানিতে ফেলেছো। গুম করেছো!

তোমাদের সবাই হয়ে উঠেছিলো— একেকটি শ্বাপদি দানব! তোমাদের দানবীয় তাণ্ডবের দৃশ্যচিত্র এখন চোখে চোখে—ঢাকতে পারবে না। আড়াল করতে পারবে না।

তোমাদের পৈশাচিকতার কথা আর বলবো না—বলতে পারবো না! ১লা ডিসেম্বরের অন্ধকার রাত আর ভোরের স্নিগ্ধ সকালকে সাক্ষি রেখে শুধু বলি—

আমরা প্রতিশোধ নেবো না! কিন্তু হক-এর ঝাণ্ডা মাটিতে পড়তে দেবো না! আগলে রাখবো—

বুকে!  হাতে!  বাহুতে!

তারপরও না পারলে লুটিয়ে পড়বো—শাহাদতের লাল বিছানায়। আগামীদিনের ইতিহাসে লাল কালি দিয়ে লেখা হবে— তোমরা ভ্রষ্ট ছিলে! ভ্রষ্ট সাদের ভ্রষ্ট পূজারী ছিলে! অশ্রুময় টঙ্গীকে করেছিলে মাজলুমের রক্তে রক্তময়!

তোমরা ফুরাত টেনে এনেছো তুরাগে!

তোমরা …!

পূর্ববর্তি সংবাদটঙ্গী ট্র্যাজেডি নিয়ে স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম যা বললেন
পরবর্তি সংবাদবাবরি মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকী, প্রতিবাদে উত্তাল ছিল কলকাতা