অরিত্রীর আত্মহত্যা : যেভাবে প্রভাবিত হয় সমাজ

ওলিউর রহমান ।। 

বর্তমান বাংলাদেশের বিদ্যমান সমাজ-ব্যবস্থায় আত্মহত্যা বা সুসাইড উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীদের কাছে চর্চার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সামান্য কোনো ব্যাপারেই আত্মহত্যার মত মারাত্মক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। একদম অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের আত্মহত্যার খবরও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে।

সম্প্রতি ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধীকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্তের দাবী জানিয়ে সে স্কুলের শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বিক্ষোভও করেছে। অরিত্রীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষের শাস্তির পদ্ধতিকে।

ভিকারুন্নিসার অরিত্রীসহ আরো যারা ইদানিং আত্মহত্যা করছে তাদের অনেকের আত্মহত্যা বাহ্যিক কারণ তালাশ করলে দেখা যায় বিদ্যমান সমাজ-ব্যবস্থার কোন সিস্টেমের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে এ কাজ করতে তারা উৎসাহিত হচ্ছে। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারা, চাকরি না পাওয়ার মতো তুচ্ছ ক্ষুদ্র ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইদানিং আত্মহত্যার চর্চা হচ্ছে।

অথচ কিছুদিন আগেও আত্মহত্যার ঘটনা এত ব্যাপক ছিল না। কদাচিৎ যা হত তার সাথে বাস্তবিকই বেদনা সংশ্লিষ্ট ব্যাপার থাকত বা প্রেমঘটিত কোনো কারণে আত্মহত্যার খবর শোনা যেত যেটাকে সাধারণ মানুষ খুবই অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখত।

কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিপ্রেশন বা সমাজব্যবস্থার ত্রুটির কারণে বর্তমানের যে আত্মহত্যা, সেগুলোর প্রতি দেখা যায় অনেকের সহানুভূতি কাজ করে যে কারণে আত্মহত্যাকারী তার কাজটিকে অত গুরুতর করে দেখে না।

বিদ্যমান সমাাজব্যবস্থার ত্রুটির সমালোচনা অবশ্যই করতে হবে এবং তা নিরসনের কার্যকর ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, তবে আত্মহত্যা যে সামাজ ও ধর্মের দৃষ্টিতে অন্যায় সে বিষয়টাও গুরুত্বের সাথে আলোচনা করতে হবে। সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে যদি আত্মহত্যাকে ডিফেন্স করা হয় তাহলে আত্মহত্যা কখনোই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।

তাছাড়া পরীক্ষায় ফেল করা, চাকরি না পাওয়া, ভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারা, অপরাধের কিছুটা মাত্রাতিক্রম করা শাস্তি যেগুলো অতি সামন্যই ব্যাপার এসব যদি আত্মহত্যার কারণ হয়। তাহলে সমাজের সজ্জন যারা কখনো হেনস্তার শিকার হন বা নির্যাতিত গোষ্ঠীর তো বেঁচে থাকবারই কথা না।

আত্মহত্যাকারীর কঠিন শাস্তির কথা হাদীসে এসেছে। রাসুল সা. বলেন, ” যে ব্যক্তি নিজেকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করবে জাহান্নামে তাকে বিষ পানের শাস্তিই দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে নিজেকে হত্যা করবে জাহান্নামে তার এরকমই শাস্তি হবে, সে ছুরি দিয়ে নিজেকে আঘাত করতে থাকবে। যে ব্যক্তি পাহাড়ের চূড়া থেকে ঝাপিয়ে পড়ে নিজেকে হত্যা করবে তাকেও জাহান্নামে সে শাস্তিই দেয়া হবে সে জাহান্নামের পাহাড় থেকে বারবার ঝাপিয়ে ঝাপিয়ে নিজেকে হত্যা করতে থাকবে।”

আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গ আল্লাহর আমানত। অযথা ইচ্ছা করে দেহের কোন অংশ থেকে রক্ত ঝরানো জায়েয নেই। আমাদের জান আল্লাহর নেয়ামত ও আমানত। অন্যকে খুন করার মতই আত্মহত্যাও নিজেকে খুন করা। খুনীর মত আত্মহত্যাকারীকেউ ক্রিমিনাল হিসেবেই দেখা উচিৎ। সহানুভূতির দৃষ্টিতে নয়।

আত্মহত্যা একটি সামাজিক অন্যায়। আত্মহত্যাকারী নিজে মরে গিয়ে তার পরিবারসহ একটি সমাজকে হুমকির সম্মুখিন করে।

সুসাইড রোধের একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা এবং আত্মহত্যার ঘটনাকে ফলাও করে প্রচার না করা। কারণ, অমুক আত্মহত্যা করেছে, সে আত্মহত্যা করেছে এসব বেশি বেশি শুনতে থাকলে বিষয়টা একদম স্বাভাবিক হয়ে যায়।

পূর্ববর্তি সংবাদসাংবাদিক সম্মেলন : টঙ্গীতে ৫ হাজার আহত, এখনও থামেনি সাদপন্থীদের নৃশংসতা
পরবর্তি সংবাদআফগানিস্তানে যৌথবাহিনীর হামলায় নিহত ৭২