বাবরি মসজিদ : কট্টরপন্থী হিন্দুদের সমাবেশ ঘিরে আতংক, অযোধ্যায় আরেকটি ৯২ হবে না তো?

১৯৯২ সালের ৬ডিসেম্বর যা ঘটেছিল, তারই পুনরাবৃত্তি হবে না তো রবিবার? – এই আশঙ্কাতেই ভুগছেন উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার মানুষ।
রবিবার দুটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ডাকা পৃথক সমাবেশে কয়েক লক্ষ মানুষ সেখানে রামমন্দির তৈরির দাবি নিয়ে হাজির হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র থেকে বিশেষ ট্রেনে চেপে কট্টর হিন্দু সংগঠন শিবসেনার কয়েক হাজার সমর্থক হাজির হয়েছে। শনিবার বিকেলে অযোধ্যায়  পৌঁছেছে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও।
অন্য দিকে আর এস এসের সহযোগী ও কট্টর হিন্দু সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদও রবিবার রাম মন্দির কীভাবে তৈরি করা যায়, তা নিয়ে জনমত জানতে ডেকেছে বিশাল ধর্ম সভা।
আর এই পরিস্থিতিতেই অযোধ্যার মানুষের মনে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে আবারও সেই ১৯৯২ সালের ৬ডিসেম্বরের মতো ঘটনা না ঘটে।

নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

ইশতিয়াক আহমেদ নামে অযোধ্যার এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছিলেন, “যেভাবে ভিড় বাড়ছে, তাতে আমাদের অনেকের মনেই একটা সন্দেহ হচ্ছে আবার ৯২ এর মতো কিছু ঘটে যাবে না তো? অনেকেই বাচ্চা আর নারীদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। ঘরে খাবার মজুত করে রেখেছি আমরা সবাই।”

কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য লাখ খানেক নিরাপত্তা কর্মী অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশও।

“নিরাপত্তা ব্যবস্থা তো সরকার ভালই করেছে। প্রচুর পুলিশ। সরকার আশ্বস্তও করছে আমাদের। কিন্তু একবার কল্যাণ সিংয়ের সরকারের কাছে তো ৯২ সালে আমরা ধোঁকা খেয়েছি। তখনও তো আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। তাই আবারও কোনও ঝামেলা হবে না তো? এই ভয় তো রয়েইছে,” বলছিলেন শের আলি।

অযোধ্যায় কয়েকদিন ধরেই অবস্থান করছেন বিবিসি হিন্দি বিভাগের সংবাদদাতা সমীরাত্মজ মিশ্র।

তিনি টেলিফোনে বলছিলেন, “প্রচুর পুলিশ রয়েছে চারদিকে। অশান্তি এড়াতে ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে যাতে দুটি সংগঠনের কেউই সভা না করতে পারে। তা স্বত্বেও সাধারণ মানুষের মনে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে – এটা আমি হিন্দু আর মুসলমান – উভয় ধর্মের মানুষের সঙ্গেই কথা বলতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি গত কদিনে।”

দুটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনেরই দাবি একই – রাম মন্দির গড়তে হবে।

শিবসেনা বিজেপির সঙ্গে সরকারে রয়েছে কেন্দ্রে। তবু তারা নিয়মিত সরকারের কাজের সমালোচনা করে থাকে। রাম মন্দির ইস্যুতেও তারা সরকারের দিকে প্রশ্ন তুলেছে যে এতদিন ধরে নরেন্দ্র মোদী মন্দির তৈরির জন্য কেন কিছু করতে পারলেন না।

অযোধ্যায় যে সব হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে শিবসেনা নেতা উদ্বব ঠাকরের সভার, সেখানেও লেখা হয়েছে, ‘মন্দির আগে, সরকার পরে’।

রাম মন্দির নিয়ে বিব্রতকর প্রশ্ন তুলে ইস্যুটাকে যাতে হাইজ্যাক করে না নিতে পারে শিবসেনা, সেজন্য আর এস এসের সহযোগী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তড়িঘড়ি পাল্টা ‘ধর্মসভা’ ডেকেছে একই দিনে, অযোধ্যাতেই।

সেখানে তারা ধর্মগুরু আর সাধারণ মানুষের মতামত জানতে চাইবে প্রকাশ্যে যে কিভাবে রামমন্দির তৈরির দিকে এগোনো যায়।

তারা ঘোষণা করেছে, এটাই হবে মন্দির তৈরির আগে ‘শেষ সমাবেশ’। এরপরে আর কোনও ধর্না, সভা, সমাবেশ নয় – শুধুই মন্দির নির্মাণের কাজে এগোনো হবে।

তবে রবিবার কয়েক লক্ষ মানুষের মধ্যে থেকে কেউ যাতে বিতর্কিত রামমন্দির-বাবরি মসজিদ চত্বরের দিকে না যেতে পারে, তার জন্য ওই অঞ্চলকে ‘হাই সিকিউরিটি জোন’ বলে ঘোষণা করেছে পুলিশ।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

পূর্ববর্তি সংবাদ‘মুহাম্মদ যেমন তোমাদের নবী, তেমনি আমাদেরও নবী’ : নাত গাইলেন শ্রী আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণ
পরবর্তি সংবাদফের রাজনীতিতে সক্রিয় একে খন্দকার : যোগ দিচ্ছেন গণফোরামে