বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু

পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)। বাংলাদেশ টেলিভিশনের টেস্ট ব্রডকাস্ট-এর মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে সোমবার (১২ নভেম্বর) থেকে।

বিসিএসসিএল সূত্রে জানা গেছে, তিন থেকে চারদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের টেস্ট ব্রডকাস্ট তথা পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শেষ হবে। বিটিভি’র (বাংলাদেশ টেলিভিশন) পরে এতে যুক্ত হবে একাত্তর টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। সম্প্রতি সাফ ফুটবলের একাধিক খেলা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সরাসরি সফলভাবে সম্প্রচার করার পরে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিসিএসসিএল -এর চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘তিন থেকে চারদিনের মধ্যে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শেষ হবে। স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। আমাদের আশা দেশের সব স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আমাদের সেবা নেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করছি। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের একটা বড় চুক্তি হয়েছে। স্কয়ার, ডিএনএস স্যাটকম ও এডিএন’র সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও আমরা বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবো।’

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ওপরে হওয়ায় ওই দেশ দুটিতে মনিটরিং এজেন্সি খোলা হবে যারা পরখ করে দেখবে ওখানকার ট্রান্সপন্ডার কীভাবে কাজ করছে। এরই মধ্যে বিসিএসসিএল দেশের তিন সেলস পার্টনার স্কয়ার, এডিএন ও ডিএনএস স্যাটকমের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান তিনটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বিভিন্ন সেবা বিক্রি ও বিপণনের কাজ করবে। তিন সেলস পার্টনারের ভি-স্যাট ও হাবের লাইসেন্স রয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি লাইসেন্সিং প্রতিবন্ধকতায় সেবা দিতে না পেরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর তাদের ভি-স্যাট ও হাব বসিয়ে রেখেছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর অন্যতম সেলস পার্টনার ডিএনএস স্যাটকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেল কবীর বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেলস পার্টনার হয়েছি। দুর্গম এলাকা, চরাঞ্চল, ছিটমহলসহ বিচ্ছিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা, ডাটা কানেকটিভিটি, ভিডিও কনফারেন্স, টেলিমেডিসিন, দূর শিক্ষণ ইত্যাদি সেবা দিতে ভি-স্যাট ও হাব ব্যবহার হবে। তিনি আশা করেন, এর মাধ্যমে আবারও ভি-স্যাটের সুদিন ফিরবে। সেবা আরও সহজ হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থাকলেই হবে না, সেবা পৌঁছাতে এসব হাব প্রয়োজন হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়। এরপর ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে স্থাপিত হয় এটি। এরপর বিভিন্ন কারিগরি পরীক্ষা শেষে স্যাটেলাইটের নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া গত ৯ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ তথা টাইটেল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। এরপরই শুরু হয়েছে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম।

জানা যায়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩৭ হাজার সমুদ্রগামী জাহাজ, লঞ্চসহ অন্যান্য জলযান ট্র্যাক করতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সহায়তা নেওয়ার জন্য দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। এগুলো ট্র্যাক করার জন্য নৌযানগুলোতে মেরিন ভি-স্যাট (ভেরি স্মল অ্যাপারেচার টার্মিনাল) বসানো হবে। এজন্য স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্য থেকে একটি এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। একটি ট্রান্সপন্ডারের সক্ষমতা হলো ৩৬ মেগাহার্টজ। এই সক্ষমতা দিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান কোথায় আছে, কোথায় নোঙর করেছে, কোথায় কোন চরে আটকে পড়েছে বা ডুবে গেছে তা চিহ্নিত করা যাবে। দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে কিনা তা চিহ্নিত করে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তি সংবাদমনোনয়ন সংগ্রহে শো-ডাউন বন্ধের নির্দেশ
পরবর্তি সংবাদনির্বাচন করবেন ইমরান এইচ সরকার!