আমেরিকা নিজ দেশে তৈরি করছে নিজের হত্যাকারী

সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর ।।  

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গত বুধবার (৭ নভেম্বর) একটি নাইট ক্লাবে গুলির ঘটনায় ঘটনাস্থলে ১৩ জন নিহন হন এবং আহত হন আরও প্রায় ১২ জন। পুলিশ বলছে, হামলাকারী আমেরিকান নৌবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ওই নাইট ক্লাবে হামলার পর হামলাকারী নিজেও পুলিশের গুলিতে নিহত হন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।

আমেরিকায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের এমন হামলার ঘটনা নতুন নয়। বিগত বছরগুলোতে প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে এমন সংবাদ। শুধুমাত্র ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের এ ঘটনা পর্যন্ত আমেরিকায় এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। যাতে নিহত হয়েছেন ৮৯ জন সাধারণ নাগরিক। আহত হয়েছেন শতাধিক।

এর আগে ২০১৭ সালে এমন হামলার ঘটনা ঘটে মোট ১৬টি, যাতে নিহত হন ১৩৯ জন। ২০১৬ সালে নিহত হন ১০৪ জন এবং ২০১৫ সালে নিহত হন ৭৩ জন। এগুলো সাম্প্রতিক বছরের পরিসংখ্যান।

নিউ ইয়র্ক টাইমস, ভয়েস অব আমেরিকা এবং উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গত ২০ বছরে এমন মস্তিষ্কবিকৃত বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় খোদ আমেরিকায় নিহত হয়েছে ৭৭৮ জন নিরীহ মানুষ। হয়তো কোনো নাইট ক্লাবে, কোনো অনুষ্ঠান কিংবা খোলা রাস্তায় গুলি চালিয়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যার এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। ২০০১ সালে ওয়ান/ইলেভেনের পর এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার হার বেড়েছে আশংকাজনক হারে।

এখন আমেরিকাজুড়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই হত্যাকারীরা কি আল-কায়েদার লোক? তারা কি ‘ইসলামি সন্ত্রাস’ দ্বারা মদদপুষ্ট? আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হন্যে হয়ে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ এসব হত্যাকারীর চৌদ্দপুরুষের অতীত ঘেঁটে ক্লান্ত, কিন্তু তাদের সঙ্গে ইসলাম বা মুসলিম কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছে না। তাহলে কেন দিন দিন আমেরিকায় বাড়ছে বিকৃত মস্তিষ্ক বন্দুকধারীদের ধারাবাহিক হামলার? কেন খোদ আমেরিকানরাই ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে নৃশংস হত্যাকারী?

এসব ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলাকারী ছিল মানসিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন আমেরিকার মতো একটি উন্নত রাষ্ট্রের মানুষ এমন ভয়াবহভাবে মানসিক অসুস্থ হয়ে পড়ে যার দরুণ নারকীয় হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে? তাহলে পুরো আমেরিকান সমাজটাই কি অসুস্থ হয়ে পড়ছে?

যারা সারা বিশ্বে সভ্যতা আর শান্তির কথা বলে বেড়ায়, যারা শান্তির জন্য যুদ্ধের কথা বলে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করে, সেই হত্যাকাণ্ডের প্রেতাত্মা কি এবার ভর করতে শরু করেছে খোদ আমেরিকানদের ঘাড়েই?

২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের সূচনা করেছিল আমেরিকা সে যুদ্ধের সাইড অ্যাফেক্ট আমেরিকান সমাজে ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে, এটা বুঝা যায়। ইসলামোফোবিয়া বা বিশ্বব্যাপী ইসলাম নিয়ে আমেরিকানদের মনের মধ্যে যে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল আমেরিকান প্রশাসন, সে ভয়ের বিষফল এখন ফলতে শুরু করেছে।

সাধারণ জনগণ তো বটেই, বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, পৃথিবীর মধ্যে আমেরিকান সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। আফগানিস্তান এবং ইরাক যুদ্ধের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

বর্তমান সভ্যতার এই আমেরিকানরা এখন ক্লান্ত। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলে লাখো মানুষের বুকের রক্তে যে আমেরিকা নিজের চেহারা ঝলমল বানাচ্ছে, সেই ঝলমলে আমেরিকার নিচে অসংখ্য মানুষ পরিণত হচ্ছে আরও জঘন্য খুনিতে। ভোগবাদ আর পুঁজিবাদের মিথ্যা অহংকারে আমেরিকা যতই উচ্চে উঠবে, ততই আমেরিকানদের ভেতরগত সুস্থতা নিচে নেমে যাবে। নিজের ঘরে অসুস্থ মানবতা রেখে আমেরিকার তখন বিশ্বব্যাপী  যুদ্ধ করতে হবে ছায়া শত্রুর বিরুদ্ধে।

আমেরিকার উচিত বাইরের পৃথিবী রেখে এবার নিজেদের ঘরের খবর রাখা। তাতেই মঙ্গল, তাদের নিজেদেরও, বিশ্ববাসীরও।

পূর্ববর্তি সংবাদবাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র
পরবর্তি সংবাদশ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিলেন সিরিসেনা, নির্বাচন ৫ জানুয়ারি