‘মক্কা মান সময়’-এর দিন!

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু ।।

মুসলিম দুনিয়ার সময় নিয়ন্ত্রক হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে শান্তি ও নিরাপত্তার পবিত্র নগরী মক্কায় স্থাপন করা হয়েছে মক্কা ক্লক। গগনচুম্বী নান্দনিক বিশালাকায় ‘মক্কা ঘড়ি’। বিশ্বের সর্ববহৃৎ এ ঘড়ির ব্যাস ৪৩ মিটার।

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ঘড়িটি ৪০০ মিটার উচ্চায় স্থাপন করা হয়েছে। মুসলমানদের কেবলা মসজিদুল হারাম থেকে এ ঘড়িটি দেখা যায় খুব চমৎকারভাবে।

সৌদি আরবের বাদশাহ আব্দুল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে মক্কা ক্লক। বিশালাকায় এ ঘড়ি চারপাশ সু-সজ্জিত ও নয়নাভিরাম করা হয়েছে ৯ কোটিরও বেশি রঙিন কাচের টুকরো দিয়ে। বৃহৎ আকৃতির ৪টি ডায়ালে কারুকার্য খচিত বৃহৎ অক্ষরে লেখা হয়েছে ‘আল্লাহ’। নগরীর সকল প্রান্ত থেকে এ ঘড়ি দৃশ্যমান। বাদশাহ আব্দুল আজিজ এনডোমেন্ট হোটেল কমপ্লেক্স-এ ঘড়িটি তৈরি করেছে সৌদি আরবের বিখ্যাত বিন লাদেন গ্রুপ। এ কমপ্লেক্সটির ছাদের আয়তন পৃথিবীর যে কোন ভবনের ছাদের চেয়ে বড়।

আল্লাহর নামের উপরের দিকে ৫৯০ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে সোনা দিয়ে মোড়ানো ৭৫ ফুট ডায়ামিটারের একটি বাঁকা চাঁদ। বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে এ চাঁদ থেকে আকাশে বিচ্ছুরিত হবে প্রায় ১৬টি উজ্জ্বল আলোক রশ্মি, যা আকাশের ১০ কিলোমিটার উঁচুতে ছড়িয়ে যাবে। প্রায় ২০ লাখ বাতি আল্লাহর নামকে প্রজ্জ্বল করে রাখে রাতভর।

তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে সেবাহির মলে যে ঘড়িটি আছে আয়তনের দিক দিয়ে এটিই ছিল এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি, যার ডায়াল ছিল ৩৬ মিটার চওড়া। কিন্তু মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৪৩ মিটার। লন্ডনের বিগবেনের চেয়ে মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৬ গুণ বড়।

পৃথিবীর দ্বিতীয় সুউচ্চ টাওয়ারে স্থাপন করা হয়েছে মক্কা ঘড়ি। এই টাওয়ারে রয়েছে সাত তারা হোটেলসহ বৃহৎ শপিং মল। টাওয়ারের উচ্চতা ৬০১ মিটার।

৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে নির্মিত চতুর্মুখী ঘড়িটির এক মুখে লাগানো হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ পিস গ্লাস মোজাইক। প্রতিটি মুখে আরবিতে লেখা আছে ‘আল্লাহু আকবর’ শব্দগুচ্ছ, যা ২১০০০ রঙিন বিজলি বাতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আর পড়া যায় ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও।

২০০৪ সালে এটির নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয় এবং ২০১০ সালের ১১ আগস্ট পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনে মক্কা ঘড়ি তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০১১ সালে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে মুক্ত করা হয়।

এই স্থাপত্যটির মূল স্থাপত্যের দায়িত্বে ছিল সৌদি বিন লাদিন গ্রুপ এবং এর স্থপতি দার আল হানদাশাহ।

গ্রিনিচ মান সময় বা গ্রিনিচ মান টাইম (GMT)-এর বিকল্প হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে এই ‘মক্কা মান সময়’ (MMT)। পবিত্র কাবা শরিফ সংলগ্ন স্থানে ঘড়ি স্থাপিত হওয়ার ফলে সমগ্র ইসলামী দুনিয়া গ্রিনিচ সময়ের পরিবর্তে মক্কা সময় অনুসরণ করবে।

মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ হোটেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। হোটেলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আবরাজ আল-বাইত কমপ্লেক্স।

বাদশাহ আব্দুল আজিজ দান প্রকল্পের অর্থায়নে এটি নির্মিত হয়েছে। ৭টি টাওয়ার একত্র করে নির্মিত এ কমপ্লেক্সের ফ্লোরের মোট আয়তন ১ কোটি ৫৬ লাখ স্কয়ার ফুট এবং পবিত্র বায়তুল হারামের সন্নিকটের এর অবস্থান। ৭৬ তলা বিশিষ্ট হোটেলটির উচ্চতা ৫৭৭ মিটার।

অনেক জ্ঞানি-গুণী মত প্রকাশ করে বলেছেন, মক্কা সময় গ্রিনিচ মান সময়ের বিকল্প উপহার দিয়েছে পৃথিবীকে। ২০০৮ সালে দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে মক্কা ঘড়ির বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ। তারা বলেন, মক্কা হলো পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্র এবং এখানে লুনার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রস্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতি ওয়াক্ত নামাযের সময় জানান দিয়ে এলার্ম বাজায় ঘড়িটি। লুনার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং ইসলামী জাদুঘর ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্মের কাছে ইসলামের ঐতিহ্য তুলে ধরবে। আর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে চাঁদ পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

পূর্ববর্তি সংবাদসাজার পর সংলাপ, সুফল নিয়ে সংশয়ে বিএনপি
পরবর্তি সংবাদগুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নির্বাচন নিয়ে বার্নিকাট যে পর্যবেক্ষণ দিলেন