ডাক্তার যেন মনে রাখেন তার পেশাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা আল্লাহর দান : মুফতি নুরুল আমিন

চিকিৎসা খাতে প্রতি বছর সরকার মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করলেও সরকারি চিকিৎসা সেবায় সন্তুষ্ট নয় অধিকাংশ মানুষ। সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যাপারে তাদের বহু অভিযোগ রয়েছে। যার অন্যতম চিকিৎসকের অনুপস্থিতি। সম্প্রতি হাইকোর্ট সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে অনুপস্থিত ডাক্তারদের তালিকা চেয়েছেন।

এসব চিকিৎসা কেন্দ্রের ডাক্তারদের অনুপস্থিতি ও দায়িত্ব অবহেলার ব্যাপারে শরিয়তের নির্দেশনা জানতে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিশিষ্ট আলেম ও শায়খুল হাদিস মুফতি নুরুল আমিনের সঙ্গে। তিনি বললেন, ডাক্তারদের দায়িত্ব ও নৈতিক দায়ের কথা। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন আতাউর রহমান খসরু

ইসলাম টাইমস : অভিযোগ আছে, সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বশীল ডাক্তার ঠিক মতো উপস্থিত থাকেন না। গ্রামাঞ্চলে এ সংকট প্রকট। এ ধরনের দায়িত্ব অবহেলার ক্ষেত্রে শরিয়তের বক্তব্য কি?

মুফতি নুরুল আমিন : সরকারের সঙ্গে তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি চুক্তি থাকে। চুক্তি বা অঙ্গীকার অনুযায়ী সেবা না দিলে তারা খেয়ানতকারী হিসেবে গণ্য হবেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (অর্থ) ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়।’ সুরা আত-তাফফিফ।

তাফসিরে মারেফুল কুরআনে মুফতি শফি রহ. বলেছেন, যেসব কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেতন বুঝে নেয় এবং দায়িত্ব আদায় করে না তারা এ আয়াতের অন্তর্ভূক্ত হবে। সে হিসেবে ডাক্তার, শিক্ষক, ইমাম, মুয়াজ্জিন, ইন্জিয়ার যাই হোক না কেন সে পরকালে জবাবদিহির মুখোমুখি হবে।

ইসলাম টাইমস : সরকারি কর্মচারী নয়, একজন ডাক্তার হিসেবে ব্যক্তির উপর আলাদা কোনো দায়িত্ব কি বর্তায়?

মুফতি নুরুল আমিন : আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমরা যথাযথ মানুষের নিকট আমানত পৌঁছে দাও। এখন যে ব্যক্তির নিকট ইলম বা জ্ঞান আছে সে হকদারের (প্রাপক) নিকট জ্ঞান পৌঁছে দেবে, যার কাছে অর্থ আছে (যেমন যাকাত) সে প্রাপকের কাছে তা পৌঁছে দেবে। আর যার কাছে সেবা আছে সে সেবা পৌঁছে দেবে। ডাক্তারের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার অধিকার মানুষের আছে। ইসলাম ডাক্তারকে সেবক হওয়ার শিক্ষা দেয়।

ডাক্তারদের মনে রাখতে হবে তার পেশাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা আল্লাহর দান। আল্লাহ যখন তাকে এ দানে ভূষিত করেছেন, তখন তাকে কিছু দায়িত্বও দিয়েছেন। সেটা হলো মানুষের সেবা করা। কোনো ডাক্তার যদি মনে রাখেন তার জ্ঞান আল্লাহর অনুগ্রহের চেয়ে বেশি কিছু না, তাহলে সে মানুষের সেবক হবে। অর্থ আত্মাৎকারী হবে না।

ইসলাম টাইমস : ডাক্তাররা গ্রামে থাকতে চান না। কিন্তু গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল …

মুফতি নুরুল আমিন : এখানে আমি শুধু ডাক্তারের দোষ দিবো না। গ্রামের রোগীদেরও দোষ আছে। তারা গ্রামে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী না। আস্থা সংকটে ভোগেন। কিছু হলেই শহরে চলে আসেন। ডাক্তারদেরও তো রোগী পেতে হবে।

তবে হ্যা, সরকার যখন তাকে গ্রামে নিয়োগ দেয়, তখন তাকে গ্রামেই দায়িত্বপালন করতে হবে। সরকার জনগণের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই তাকে গ্রামে নিয়োগ দেয়। এখন সেখানে না থাকলে মানুষ বঞ্চিত হবে, শূন্যতা তৈরি হবে। অন্যদিকে সেও খেয়ানতকারী বলে গণ্য হবে।

ইসলাম টাইমস : গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াতে শরিয়ত ডাক্তারকে উদ্বুদ্ধ করে কী?

মুফতি নুরুল আমিন : অবশ্যই উদ্বুদ্ধ করে। মানুষের প্রয়োজন পূরণ করা, তার সেবা করাকে আল্লাহ তায়ালা নিজের সেবা করার সাথে তুলনা করেছেন। তবে সরকারপ্রদত্ত দায়িত্বের বাইরে তাকে গ্রামে থাকতে বাধ্য করে না শরিয়ত।

ইসলাম টাইমস : ডাক্তারে অর্থচাহিদা দিন দিন বাড়ছেই। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে রোগীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেয়া এবং কমিশন গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া যায় অহরহ। অর্থ উপার্জনে ডাক্তারদের দৃষ্টিভঙ্গি কি হওয়া উচিত?

মুফতি নুরুল আমিন : অর্থ উপার্জনে ইসলাম কারো উপর কোনো সীমা নির্ধারণ করে দেয়নি। বরং আয় ও ব্যয়ের পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। বৈধ পথে ডাক্তার যতো খুশি উপার্জন করবেন। তবে খেয়াল রাখবেন তা যেন জুলুমের পর্যায়ে না পরে। ইহকালেই সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার না করে পরকালের জন্যও যেন তারা কিছু রেখে দেন।

কোনো ডাক্তার যদি বিনা প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেন, তবে তার দুটি পাপ হবে। এক. অন্যায়ভাবে অর্থ অর্জন করার পাপ, দুই. রোগীকে হয়রানি করা এবং কষ্ট দেয়ার পাপ।

ইসলাম টাইমস : একজন মুসলিম ডাক্তারের বৈশিষ্ট্য কি হওয়া উচিৎ?

মুফতি নুরুল আমিন : সে মানুষের সেবা করার নিয়ত করবে। মানুষের কল্যাণচিন্তা তার মধ্যে প্রবল থাকবে। সে আশা করবে সেবাপ্রদানের মাধ্যমে আল্লাহ তার প্রয়োজনও পূর্ণ করবে। তবে প্রয়োজন পূরণের চেয়ে সেবার দিকটাকে বেশি গুরুত্ব দেবে।

পূর্ববর্তি সংবাদজাবালে নূরের মালিকসহ ৬ জনের বিচার শুরু
পরবর্তি সংবাদকালাকানুন পাসের হিড়িক চলছে : রিজভী