জমজম সেবকের দিন

সাকিব জাফরী ।।  মক্কা মুকাররমা থেকে

ওয়াসিম কায়সার। আগাগোড়া সৌভাগ্যে মোড়া এক ব্যক্তি। ওয়াসিম অর্থ স্মার্ট। তাকে দেখে যে কেউ বলবে স্বার্থক নামকরণ। প্রৌঢ় বয়সী। শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত দীপ্তিময় চেহারার অধিকারী।

তার সাথে পরিচয়ের শুরু মসজিদুল হারামে। বায়তুল্লাহর সাথে তার সখ্যতা দীর্ঘ আট বছর ধরে। এটাই তার কর্মস্থল, এটাই তার ঘরবাড়ি। তার অধীনে আরো আট-দশ জন রয়েছেন। তারা সবাই আল্লাহর মেহমানদের সেবায় নিয়োজিত। জমজমের পানি সংক্রান্ত বিষয়াবলী দেখভাল করাই তাদের কাজ।

মসজিদুল হারামে ঢুকলেই আমরা যে শত শত ফিল্টার দেখতে পাই, যে চমৎকার ব্যবস্থাপনা আমাদের মুগ্ধ করে-তার পেছনে রয়েছে ওয়াসিমদের মত প্রবাসী শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টা। নতুন গ্লাসের সরবরাহ, ব্যবহৃত গ্লাস সরিয়ে ফেলা, পানিশূন্য ফিল্টার পরিবর্তন-এ সবই তাদের দায়িত্বে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য তারা খুশিমনে এই খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

সারা বছর আট ঘণ্টা করে তিন শিফটে কাজ করলেও হজ আর রমজান মাসে দশ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। মাসে চারদিন ছুটির পাশাপাশি প্রতি দুই বছরে একবার দেশে যাওয়ার সুযোগ মিলে।

থাকার ব্যবস্থা কোম্পানি করলেও খাবার কিনে নিতে হয় নিজেদেকেই। বেতন আকারে যেটা পান খরচ ও প্রয়োজনের তুলনায় সেটা অপ্রতুলই বলা চলে। তবে আল্লাহর মেহমানগণ মাঝেমধ্যে ভালোবেসে যা দেন তা নিয়ে ভালোই কাটে ওয়াসিম কায়সারের জীবন।

তারা সত্যিকার অর্থেই সৌভাগ্যবান। সেই জাহেলি যুগ থেকেই হাজিদের পানি পান করানো বিশেষ সম্মানের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কুরাইশরা এটাকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করতো। হাদিসে আছে, সর্বোত্তম সাদাকাহ হলো পানি পান করানো।

কথিত আছে, এর প্রচলন ঘটিয়েছেন আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চতুর্থ পূর্বপুরুষ কুসাই ইবনে কিলাব। কিন্তু কুরআন বলছে, বায়তুল্লাহর মেহমানদের সর্বপ্রথম পানি পান করিয়েছিলেন জিবরাইল আলাইহিস সালাম।

ধীরে ধীরে উন্নত হতে থাকা জমজম ব্যবস্থাপনা এখন যথেষ্ট সুবিন্যস্ত ও সুপরিকল্পিত। এখন পুরো হারামজুড়ে সব মিলিয়ে প্রায় আট হাজার ছোটো ছোটো ফিল্টার আর পানির ট্যাপ লাগানো ফিল্টার সদৃশ বড় বড় সাতশো পানি বণ্টন কেন্দ্র রয়েছে। তাছাড়া মসজিদে নববিতেও রয়েছে জমজম পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ।  সাধারণ মানুষের মধ্যে জমজমের পানির চাহিদা মেটানোর জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

ইতিহাস আর মুসলিম ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জমজমের কুপ ও এর বরকতময় পানি। ওয়াসিম কায়সারের মতো শ্রমিকরা নিজেদের শ্রম দিয়ে সেই ঐতিহ্য আর বরকতকে তুলে দেন কাবাঘরে আগত মেহমানদের হাতে। দিনশেষে এই তৃপ্তি নিয়েই তারা ফিরে যান যার যার ঘরে।

পূর্ববর্তি সংবাদনেতা-কর্মীরা গণগ্রেফতারের শিকার হচ্ছে : রিজভী
পরবর্তি সংবাদদেশের সব কারাগারে আদালত কক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর