‘রোহিঙ্গা শিবিরে যারা আগে থেকে কাজ করছেন, তাদের সহযোগিতা করুন’ -মাওলানা রফীউদ্দিন

বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ত্রাণ ও সাহায্য-সহযোগিতা বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ঢাকা গেণ্ডারিয়ার বাইতুল উলুম (ঢালকানগর) মাদরাসার মুহাদ্দিস ও শিক্ষাসচিব মাওলানা রফীউদ্দিন। সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এসে সেখানকার বর্তমান অবস্থা, প্রয়োজন, সমস্যা-সংকট ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন ইসলাম টাইমস-এর সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সাদ আবদুল্লাহ মামুন


 

: রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্তমান অবস্থাটা কী ?

:: ওখানে আগের চেয়ে দান ও সহযোগিতার পরিমাণ অনেক অনেক বেশি প্রয়োজন। এনজিও ও  মিশনারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ওখানে লাখ লাখ টাকা বিলি করছে। তারা সাহায্য করছে তাদের নীতি সামনে নিয়ে। যে ঈমান হেফাজত করার জন্য রোহিঙ্গারা দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে, এখন সেই ঈমানের সম্পদটি তাদের হারিয়ে যাচ্ছে।

: সাধারণ মুসলমান ও উলামায়ে কেরাম তো সহযোগিতা করেছেন। তা হলে…

:: শুরু থেকেই আমাদের মুসলিম ভাই এবং সারা দেশের উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। তারাও অনেক টাকা-পয়সা দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু এখন আমাদের তেমনভাবে যাতায়াত নেই ওখানে। যে কারণে সেখানকার প্রয়োজনগুলো আমাদের সামনে আসছে না। আমি গত সপ্তাহে সেখান থেকে ফিরেছি। কাছ থেকে দেখে এসেছি সেখানকার প্রয়োজনগুলো।

: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কীভাবে সহযোগিতা করা হয় বা কীভাবে করা উচিত?

এখন যারা ওখানে যান, তারা চিন্তা করেন আমরা আমাদের নিজের হাতে সাহায্য করব। অথচ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর নিজের হাতে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা বা সুযোগ নেই। সুযোগ যে নেই একেবারে, তা নায়, আছে।

বাংলাদেশের সমবায় বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে যেসব অনুমোদিত সেবাসংস্থা রয়েছে তারাই কেবল ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে সরাসরি দান-সহযোগিতা করতে পারেন। যেমন মারকাজুল ইসলামি, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম, কুয়েতি সংস্থা ইত্যাদি। এসব সংস্থা সরকারিভাবে অনুমোদিত। তাদের কা্র্ড আছে, তারা ভেতরে গিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। এ ছাড়া অন্যদের জন্য ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দান করার অনুমতি নেই।

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার আগ্রহ প্রবল

: বিদেশিরা বা এনজিওগুলো কীভাবে সহযোগিতা করে?

:: বিদেশ থেকে যেসব এনজিও ও অমুসলিম মিশনারি আসে তারা তো অনুমতি নিয়েই আসে। এখানে এসে তাদের তেমন কোনো অনুমতির দরকার হয় না। তারা এসে স্বাভাবিকভাবে কাজ করে যায়।

: যারা ব্যক্তি উদ্যোগে সেবার কাজটা করতে চান তাদের কী করা উচিত?  

নতুন করে যারা রোহিঙ্গাশিবিরে ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করতে চান, সহযোগিতা করতে চান, তাদের উচিত হবে অনুমোদিত কোনো সেবাসংস্থার মাধ্যমে বা আগে থেকে যারা যারা কাজ করে এসেছেন তাদের সঙ্গে কাজ করা। অনুমোদিত যেসব ইসলামি সেবাসংস্থা আছে তাদের কারো সঙ্গে পরিচয় থাকলে তিনি তাদের সঙ্গে যেতে পারেন, তাদের সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে পারেন, সাহায্য – সহযোগিতা করতে পারেনে। এতে সহযোগিতার কাজটাও হবে আবার সহযোগিতাকারীর মনের প্রশান্তিটাও আসবে।

: ব্যক্তি উদ্যোগে দিলে কী সমস্যা ?

:: ওখানে যারা যায়, তাদের অনেককেই দেখি, ক্যাম্পের বাইরে, এখানে-ওখানে রাস্তায় থাকা কিছু ভাওতাবাজ-প্রতারক লোকদের হাতে টাকা-পয়সা দিয়ে চলে আসে। হঠাৎ করে গিয়ে এক-দুই দিন থেকেই ওখানকার প্রকৃত গরিব লোকদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। খরচ করার প্রকৃত খাতটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, চারপাশে ধান্দাবাজ লোকদের আনাগোনা। কাকে জিজ্ঞেস করবেন!

অনুমোদিত সেবাসংস্থার যারা ওখানে কাজ করে, তাদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞ, বিশ্বস্ত ও আমানতদার এমন কারও কাছে টাকা দেওয়া বা তার সঙ্গে গিয়ে  সহযোগিতা করা যায়। তারা কাজ করতে করতে প্রকৃত হকদারদের চেনেন এবং খরচের সঠিক খাতগুলো জায়গা ও স্থানসহ চেনেন। যারা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সহযোগিতা করতে চান তাদের এ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। এ ছাড়া অন্য উপায়ে ওখানে টাকাপয়সা বা কোনো সহযোগিতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

: এনজিও ও মিশনারিগুলো কীভাবে সহযোগিতা করে ?

:: এনজিও ও মিশনারির লোকেরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণত তাদেরই সহযোগিতা করে, যাদের ব্যাপারে তাদের ধারণা হয়, এ বা এরা ইসলামী জীবন থেকে  সরে আসবে। এ ধরনের লোকদের টার্গেট করে করে সাধারণত তারা সহযোগিতা করে। যারা নামাজ-কালাম পড়ে, ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরে, যাদের চেহারা-সুরতে খাঁটি মুসলিম মনে হয়, তাদেরকে এনজিওগুলো তেমন একটা দান করে না। করলেও কম করে। মসজিদ-মাদরাসায় তো তারা দান করেই না।

: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদ-মাদরাসা আছে কী পরিমাণ?

:: আলহামদুলিল্লাহ! ওখানে বেশ কিছু মসজিদ-মাদরাসা আছে। মসজিদের সংখ্যা আনুমানিক ৬০টি এবং মাদরাসার সংখ্যা আনুমানিক ৩৫/৩৬টি হবে। এটা আনুমানিক বললাম।

মকতবে পড়ছে রোহিঙ্গা শিশুরা

: এনজিও বা মিশনারিরা এদের সহযোগিতা করে না কেন?

:: যারা মসজিদ-মাদরাসার সঙ্গে জুড়ে আছে, তাদের ঈমান যে মজবুত, তারা যে ইসলামি জীবনধারা থেকে সরবে না, এটা তারা ভালো করেই জানে এবং বোঝে। যে কারণে তারা এদের সহযোগতিটা তেমনভাবে করে না। মনে করুন, যারা মাদরাসায় পড়ে, যারা মসজিদে এসে ইমাম সাহেবের কাছে কোরআন শেখে, তালিমে বসে, তারা সাধারণত অন্য ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। যে ঈমানের সবক শিখছে সে তো ঈমানের শিক্ষাটা বিক্রি করবে না, না খেয়ে থাকবে তারপরও ঈমান বিক্রি করবে না।

যাদের ব্যাপারে তাদের ধারণা হয়, টাকা-পয়সা পেলে ইসলাম থেকে সরে যাবে, এ ধরনের লোকদের তারা বেশি দেয়। তাদের কাউকে কাউকে হাজার হাজার টাকাও দেয়।

: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহযোগিতা পাওয়ার বেশি হকদার কারা ? কাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করেন?

:: মসজিদ-মাদরাসা তো আছেই। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত দীনদার গরিব মুসলমানদের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। তবে বিশেষভাবে ওইসব পরিবার, যাদের পরিবারে পিতা নেই, স্বামী নেই, ভাই নেই। ছেলে বা পুরুষ নেই। আবার তারা দীনদারও। এসব নারীদের উপার্জনের কেউ নেই। আবার লজ্জা-শরমের কারণে অন্যদের মতো তেমন করে চাইতেও পারে না। ফলে তারা বঞ্চিত থেকে যায় বেশির ভাগ সময়। এ ধরনের নারী ও পরিবারগুলোর তালিকা ওখানকার দীনদার এবং আলেম ও ইমামদের কাছে আছে। তাদের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করি।

: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

:: আপনাদেরকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

পূর্ববর্তি সংবাদআলোচনার পূর্বে তফসিল ঘোষণা না করার অনুরোধ জানাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
পরবর্তি সংবাদনাপাক কাপড় কি তিনবার ধোয়া জরুরি?