কে হচ্ছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পরবর্তী আমির

আতাউর রহমান খসরু ।।

শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর কার্যত দল থেকে অব্যহতি নেয়ার পর ২০১০ সালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের হাল ধরেন সিলেটের প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান। মোট চার সেশনে  আট বছর আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। আল্লামা আজিজুল হক রহ.- এর ইন্তেকালের এক বছর আগেই তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির নির্বাচিত হন। দলের নেতা-কর্মীদের আস্থার প্রতীক হিসেবেই আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

গতকাল ১৯ অক্টোবর তার মৃত্যুর পর নতুন করে নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এখন দলের ভেতরে ও বাইরে একটি প্রশ্ন, কে হচ্ছেন আল্লামা আজিজুল হক রহ. প্রতিষ্ঠিত দলের পরবর্তী আমির? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে ইসলাম টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্য, শায়খ পরিবার ও বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর পরবর্তী আমির হিসেবে তিনটি নাম উঠে এসেছে। তারা হলেন, অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

এছাড়াও মাওলানা যোবায়ের আহমদ আনসারী ও মাওলানা রেজাউল করিম জ্বালালীর নামও বলেছেন কেউ কেউ।

তবে চলতি সেশনের আগ পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী জানুয়ারির পূর্বে নতুন আমির নিয়োগের সম্ভাবনা খুবই কম বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

তারা বলেছেন, ‘বর্তমান সেশনের মাত্র দুই মাস বাকি আছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে দলের কাউন্সিল। এ দুই মাসের জন্য নতুন আমির নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আমির নিয়োগ দেয়ার কথা চিন্তা করছেন তারা।’

সাংবিধানিক জটিলতার জন্যই আমির নিয়োগে বিলম্বের কথা ভাবছেন বলে তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংবিধান অনুযায়ী আমির নিয়োগের জন্য শুরা সদস্যদের বৈঠক আহবান ও ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়।

আর ভারপ্রাপ্ত আমির নিয়োগের বিষয়ে আগামী ৩ নভেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন।

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারপ্রাপ্ত আমির নিয়োগের আগ পর্যন্ত সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরীই বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমিরের দায়িত্বপালন করবেন বলে জানান এ নেতা।

আবার আমিরের মৃত্যু ও পরবর্তী আমির নির্বাচনের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক এগিয়ে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন। তিনি বলেন, ‘আগামী সোমবার (২২ অক্টোবর) আমাদের ঢাকাস্থ নির্বাহী কমিটির বৈঠক আছে। এ বৈঠকে ৩ তারিখের বৈঠক ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হতে পারে।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পরবর্তী আমির হিসেবে মাওলানা মাহফুজুল হকের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন অনেকেই। দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে শায়খ পরিবার পর্যন্ত অধিকাংশই তার সম্ভাবনার কথা বলছেন।

এর পেছনে তাদের কয়েকটি যু্ক্তি রয়েছে। তা হলো, মাওলানা মাহফুজুল হক শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলেদের মধ্যে দলে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়, তার উলামাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতাও বেশি এবং মহাসচিব হিসেবেও তিনি দলকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে শায়খ পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘নিয়মাতান্ত্রিকভাবে পরবর্তী আমির নির্বাচিত হবেন। কিন্তু সত্যি বলতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে মাওলানা মাহফুজুল হকের বিকল্প কোনো নেতৃত্ব নেই।’

তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, এটা কি শায়খের ছেলে হিসেবে? তিনি বলেন, ‘না। শায়খের ছেলে হিসেবে পদগ্রহণের ইচ্ছে থাকলে অনেক আগেই তা করা যেতো। কিন্তু আমরা চাই দলীয় নিয়ম রক্ষা করে এবং সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করেই সবাই এগিয়ে যাক। মাওলানা মাহফুজুলক হক শায়খের ইন্তেকালের পর এতোদিন দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন করে সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করেছেন।’

সম্ভাবনার বিচারে দ্বিতীয় স্তরে রয়েছেন অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী। যেহেতু অতীতে আল্লামা আজিজুল হক অভিভাবক পরিষদ থেকে আমির হয়েছিলেন এবং সারা দেশে আল্লামা আশরাফ আলীর সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাই অনেকেই পরবর্তী আমির হিসেবে তার সম্ভাবনা দেখছেন।

তবে সম্মিলিত কওমি শিক্ষাবোর্ডের কো-চেয়ারম্যান ও বেফাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি হওয়ায় তিনি সরাসরি আমিরে পদ গ্রহণ নাও করতে পারেন বলে মনে করেন অনেকেই।

অন্যদিকে আমিরের পর সর্বোচ্চ সিনিয়র পদে দায়িত্বপালন করায় মাওলানা ইসমাইল নূরপুরীরও আমির হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে বলেন মনে করছেন দলের একটি অংশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘পরবর্তী আমির কে হবেন কাউন্সিলে সে সিদ্ধান্ত নিবে দলের শুরা সদস্যরা। তবে নায়েবে আমিরদের মধ্য থেকে সিনিয়র নায়েবে আমির হিসেবে ইসমাইল নূরপুরীর সম্ভাবনায় সবচেয়ে বেশি।’

মাওলানা মাহফুজুল হক অথবা অন্য যে কেউ পরবর্তী আমির নির্বাচিত হোন তার কাছে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা হলো তিনি দলকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে সত্যিকার গণমানুষের সংগঠনে উন্নীত করবেন। নেতা-কর্মীদের এ প্রত্যাশা পূর্ণ হোক সেই কামনায় রইলো।

পূর্ববর্তি সংবাদআহসান মঞ্জিল : বাংলার নবাবী স্মৃতিকীর্তি
পরবর্তি সংবাদগান বাজানো নিয়ে সম্মিলিত জোটের মহাসমাবেশে কী হয়েছিলো?