‘উর্দু সম্মিলনগুলোতে লেখকদের সঙ্গে পরিচয় গড়ে ওঠে’ -ড. গোলাম রব্বানী

আবু তাশরীফ ।।

উর্দু সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিক কাজটা প্রধানত করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উর্দু বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগও সেরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার পাশাপাশি আন্তঃদেশীয় উর্দু চর্চার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এ বিভাগের শিক্ষকদের সম্পর্কটা বেশ জোরালো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা হলো গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায়। তিনি জানালেন, এ পর্যন্ত উর্দু চর্চার বিভিন্ন কনফারেন্সে ভারত সফর করেছেন সাত বার। এসব সম্মিলনীতে বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা একটা বড় কাজ। বিভিন্ন দেশের লেখক-কবিদের সঙ্গে দেখা-পরিচয় ও মতবিনিময়ের ব্যাপারটিও বেশ উপভোগ্য।

২০১৩ থেকে দিল্লি, মিরাঠ, হায়দারাবাদ, মুম্বাইয়ের কয়েকটি সম্মিলনীতে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন। দিল্লির সম্মিলনটা হয় বেশ বর্নাঢ্য। এনসিপিইউএল (জাতীয় উর্দু ভাষা বিকাশ পরিষদ) ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এরই ব্যবস্থাপনায় প্রায় বছর দিল্লিতে হয় আন্তঃদেশীয় একটি উর্দু সম্মিলন। আট-দশটি দেশ থেকে লেখক-গবেষকরা আসেন। সেখানে তাদের নতুন নতুন কাজ ও চর্চা সম্পর্কে জানা যায়।

ড. গোলাম রব্বানী জানালেন, মিরাঠের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসলাম জামশেদপুরী এ-জাতীয় আয়োজনের বড় একজন সংগঠক। তিনি ডিসেম্বরে আরেকটি সম্মিলনীতে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ ছাড়াও উর্দু-গবেষক বেগি ইহসাস, ছোট গল্পকার সালাম বিন রাজ্জাক, ইশফাক, কানাডার জাভিদ দানিশের সঙ্গে পরিচয় গড়ে উঠেছে তার। উর্দু সাহিত্যে এখন যারা কাজ করছেন, তাদের অনেকেরই খোঁজখবর পাওয়া যায় এদের সঙ্গে কথা বলে।

পাকিস্তানেও উর্দু সাহিত্য নিয়ে কাজ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কয়েক বছর আগে আমন্ত্রণ পেলেও ব্যস্ততার কারণে ড. গোলাম রব্বানী সে-দেশে যেতে পারেননি। ভারতে অনুষ্ঠিত উর্দু সম্মিলনগুলোতে যেসব লেখক আসেন তাদের বেশির ভাগই ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিভিন্ন দেশের নাগরিক। বাইরের দেশগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে তারা উর্দু নিয়ে কাজ করে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল মুশায়েরা’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু বিভাগ ২০১৭ সনে একটি আন্তঃদেশীয় উর্দু সম্মিলন করেছিল। সেখানে ভারত থেকে চারজন উর্দু লেখক-গবেষক এসেছিলেন। আর বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে যারা উর্দু সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত তাদের একটি অংশ এতে যোগ দিয়েছিলেন।

দিল্লি উর্দু সম্মিলনীর একটি আকর্ষণীয় পর্ব হচ্ছে, মুশায়েরা বা তাৎক্ষণিকভাবে রচিত কবিতার মজলিস। ভাষাভিত্তিক মঞ্চ-উপস্থাপনাও হয় সেখানে। ‘ম্যায় উর্দু হো’ নামের একটি উপস্থাপনায় উর্দু ভাষার জন্ম, চর্চা ও ইতিহাস নিয়ে আয়োজনটা খুব মনোযোগ কেড়েছিল গোলাম রব্বানীর। ভারতে হিন্দি ও উর্দুর একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। উর্দু ভাষার ওপর হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার একটি কসরতও লক্ষ করা যায় সেখানে। ওই প্রেক্ষাপটে সেখানে উর্দু ভাষার চর্চাকে ধরে রাখার আলামতগুলো জাগিয়ে রাখা হয়।

ভারত সফরে গেলে প্রতিবারই ড. গোলাম রব্বানী উর্দু সাহিত্যের অনেক বইপত্র কিনে আনেন। তিনি জানালেন, ২০১৩ সনে প্রায় ৫০ হাজার টাকার বইপত্র মুম্বাই থেকে কিনে এনেছিলেন।

পূর্ববর্তি সংবাদ‘হ্যাশট্যাগ মি-টু’ খুলে দিচ্ছে ভোগবাদী সমাজের মুখোশ
পরবর্তি সংবাদইংল্যান্ডে বেড়েছে মুসলিমবিদ্বেষী অপরাধের হার