মুম্বাইতে আবার বাংলাদেশী খোঁজাখুজি চলছে

মুম্বাইতে বাংলাদেশী খোঁজাখুজি

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : ভারতের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই দেশের নানা প্রান্তে অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করার দাবি তুলছে বিজেপি। আর এই পটভূমিতেই আরও একবার আক্রমণের নিশানায় মুম্বাইয়ের কথিত অবৈধ বাংলাদেশীরা, যাদের দেশ থেকে তাড়ানোর দাবি উঠছে প্রকাশ্যেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোটের আগে শ্রমজীবী এই গরিব মানুষগুলোকে আরও একবার রাজনৈতিক বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা চলছে।

মুম্বাইয়ের ভায়ান্দার স্টেশনের একটু দূরেই একটি বিশাল কলোনি। লোকের মুখে মুখে যার নাম ‘বাংলাদেশ বস্তি’। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ভারতে থাকা বাংলাদেশীদের কখনও ‘ঘুষপেটিয়া’ (অনুপ্রবেশকারী), কখনও ‘দীমক’ (উইপোকা) বলেও গালাগাল করছেন।

ভায়ান্দারের তথাকথিত ‘বাংলাদেশ বস্তি’র বাসিন্দা ঊষা, মুকেশরা জানাচ্ছেন, তাদের কলোনির নাম বাংলাদেশের নামে হলেও সেখানে একঘর বাঙালি পর্যন্ত নেই। বাংলাদেশ বস্তিতে চা-বিস্কুটের দোকান ঊষা দেবীর। তার কথা হলো, বাইরের একটা দেশের নামে কেন তাদের কলোনির নাম, সেটাই তাদের এতদিন ভাবিয়ে এসেছে।

বস্তির পুরনো বাসিন্দারা বলেছেন, চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে যখন পুরনো ঝোপড়পট্টি ভেঙে এই কলোনি গড়ে তোলা হয়, তখন বাংলাদেশ যুদ্ধে জেতার সম্মানে বস্তির নামকরণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের নামে। এমনকি কোনো দিন কোনো বাঙালি এই বস্তিতে ছিল না। অথচ এই ‘বাংলাদেশ বস্তি’ নামটা ব্যবহার করেই কথিত অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের আবেগকে খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন বিজেপি নেতারা।

হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশীর কথা বলা হচ্ছে। অথচ মুম্বাইয়ের কোনো বস্তিতেই সহজে তাদের দেখা মিলবে না। বরং সেখানকার বাঙালি বাসিন্দারা সবাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা।

 

মুম্বাইতে বাংলাদেশি খোঁজাখুজি

মুম্বাইয়ের বিখ্যাত বাঙালি কবি-সাংবাদিক ও শিবসেনার সাবেক এমপি প্রীতীশ নন্দী বলেন, ‘মুম্বাই শহর কথিত অবৈধ বাংলাদেশীদের নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। আসলে ভোটের জন্য মাঝে মাঝে কিছু কিছু পার্টি চেঁচামেচি করে এই ইস্যুটা নিয়ে। কারণ তারা জানে, যদি ঘৃণা ছড়ানো যায় তা হলে সেটা রাগের জন্ম দেবে। আর সেই রাগটা নাগরিকদের ভোটিং প্যাটার্ন বদলে দেবে।”

দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এই রাগটাই কিন্তু এখনকার এই সময়ে সবচেয়ে ডমিন্যান্ট মেটাফোর! আইডিয়াটা হল সবাই যেন রেগে যেতে চাইছে, একটা লড়াই করার বাহানা খুঁজছে! মুম্বাইয়ের সেই ‘রাগ’টাকে উসকে দিতেই কিছু হিন্দুত্বপন্থী দল এই অসহায় গরিব বাংলাদেশীদের ব্যবহার করছে বলে প্রীতীশ নন্দীর সেরকমই স্থির বিশ্বাস।

মুম্বাইয়ের মানুষ এটা জানে, শহরে যতক্ষণ কাজের সুযোগ আছে, ততক্ষণ বাইরে থেকে আসা মানুষের ঢল ঠেকানো যাবে না।

ভারতে রয়্যাল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ডের সাবেক প্রধান ও মুম্বাইয়ের রাজনীতিবিদ মীরা সান্যাল মনে করেন, মুম্বাই শহরটাই তো গড়ে তুলেছে বাইরে থেকে আসা লোকজন। শুধু ভারত নয়, ভারতের বাইরে থেকেও লোকজন এখানে এসেছে। বাংলাদেশীরা ব্যতিক্রম হতে যাবে কেন? আমি মনে করি বিদেশি কর্মীদের জন্য এই শহরে বৈধ ওয়ার্ক পারমিট চালু করা উচিত, যাতে তারা এখানে এসে মাথা উঁচু করে কাজ করে আবার ফিরেও যেতে পারে।”

প্রীতীশ নন্দীও বিশ্বাস করেন, মুম্বাইয়েরও উচিত বাংলাদেশী-সহ সব বিদেশী অভিবাসীদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া। তার সাফ কথা, নিউ ইয়র্ক বলুন বা মুম্বাই, পৃথিবীর সব বড় বড় শহর গড়ে তুলেছে বিদেশিরা। আপনি যদি বিদেশিদের ঢুকতে না-দেন, তাদের সংস্কৃতিকে আপন করে না নেন, কিছুতেই কোনো শহরের উন্নতি হবে না।

আসামের পর দেশের নানা প্রান্তে যে এখন নাগরিক তালিকা তৈরির দাবি উঠছে, সেটাতে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। মুম্বাইয়ের কথিত বাংলাদেশীরাও আপাতত এই বিতর্কের জাঁতাকলেই পড়েছেন। তারা কি নিরাপত্তার হুমকি, না কি অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কিছু অধিকারও তাদের প্রাপ্য? এর আগেও বহুবার মুম্বাইতে অবৈধ বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শ্লোগান উঠেছে, আবার থিতিয়েও গেছে।

মাস ছয়েকের মধ্যে ভারতে সাধারণ নির্বাচন। অন্তত তখন পর্যন্ত কিছু কিছু রাজনৈতিক দল যে এই ইস্যুতে তাদের ভোগাবে, সেই ইঙ্গিত কিন্তু পরিষ্কার!

সূত্র : বিবিসি বাংলা

পূর্ববর্তি সংবাদটঙ্গীতে ওয়াজাহাতি জোড় : ওলামায়ে কেরাম যা বললেন
পরবর্তি সংবাদচট্টগ্রামের পৃথক দু’টি স্থানে পাহাড় ও দেয়াল ধসে ৪ জন নিহত